শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের নিষেধাজ্ঞা উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প বাংলাদেশ মিশনে হামলা, হিন্দু সংগঠনটির বয়স ১ সপ্তাহ! আজ থেকে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব? তারেক রহমানের দেশে ফেরা-আইনি প্রক্রিয়ার বাইরেও আছে রাজনৈতিক সমীকরণ রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক থেকে বেরিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ভালো আছেন : হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ধর্ম ও মতের পার্থক্য থাকলেও আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য : প্রধান উপদেষ্টা
মা-হারা তুবাকে পুলিশ কর্মকর্তার আবেগঘন খোলা চিঠি

মা-হারা তুবাকে পুলিশ কর্মকর্তার আবেগঘন খোলা চিঠি

স্বদেশ ডেস্ক:

ছোট্ট তুবাকে ভর্তির জন্য স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় গত শনিবার ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এই নিয়ে এখন দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা, বইছে নিন্দার ঝড়। মা-হারা সেই তুবাকে আবেগঘন এক খোলা চিঠি লিখেছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) ইফতেখায়রুল ইসলাম।

চিঠিটি আমাদের সময় অনলাইন পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রিয় মা তুবা,

যখন তোর ছোট্ট চেহারাটি দেখেছি টিভি পর্দায় তৎক্ষণাৎ আমি আমার মেয়েটির কথা ভেবেছি! ঠিক তোর মতো ছোট্ট একটি মেয়ে আছে আমার!

জানিস, তুবা তোর আর আমার মাঝে অনেক মিল মা। আবার অনেক অমিলও আছে…

আমি পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান তুইও ছোট্ট তাই না মা? আমার বাবা নেই, তোর বাবা থেকেও নেই! আমি মা হারিয়েছি আজ থেকে তিন বছর আগে ঠিক এই জুলাই মাসে, তুইও মা হারালি জুলাই মাসে। আমি প্রতি বছর ২২ জুলাই মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি এখন থেকে তুইও করবি তবে দু’দিন আগে, ২০ জুলাই।

তোর অনেক প্রশ্ন আছে আমি জানি, সবাই মনে করছে তুই কিছুই বুঝছিস না! তুই মনে মনে মায়ের ফিরে আসার প্রতীক্ষা করছিস, তাই নাহ্?  জানিস আমিও প্রতীক্ষা করি…  আমাদের দুজনের কারো প্রতীক্ষাই শেষ হবে না! তুই অবশ্য প্রশ্ন করতে পারিস আমাকে, আমার মা কীভাবে চলে গেলেন? আমার মা আমাকে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাভাবিকভাবেই ওপারে চলে গেছেন!

তুই কি তোর মা কীভাবে চলে গেছেন, তাও জানতে চাস মা? তোর মাও তোকে ঠিক আমার মতো প্রতিষ্ঠিত করতে স্কুলে ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন! ওখানে হলো কি মা, কিছু মস্তিষ্ক বিবর্জিত ঠাণ্ডা মাথার খুনী খেলার ছলে তোর মাকে মার, মার,মার…. বলে মারতেই থাকলো… মনে করলো এটা যেন একটা পুতুল! অবিকল মানুষের চেহারার মতো কতগুলো অমানুষ শুধু মেরেই গেছে তোর অভাগিনী মাকে… তুই হয়তো তাদের কাউকে দেখলে চাচা, মামা বলে ডাকতি! হয়তো কাছে থাকলে বলতি, আমার মাকে মেরো না, আমার মাকে মেরো না… ওই পাষণ্ডদের কানে তোর মা ডাক পৌঁছাত কিনা তাতে যদিও সন্দেহ আছে আমার। ওই অমানুষগুলো একটিবারের জন্য তোর কথা ভাবেনি মা! ওদের অনেকের ঘরেই তোর মতো তুবা আছে। ফুলের মতো সাজিয়ে রাখে নিজেদের তুবাকে!  তুই তুবাকে নিয়ে ওদের ভাবনার একটুকুও সময় নেই মা!

জানিস মা তোর এই চাচারা রাস্তায় অনেক অন্যায় হয়ে গেলে টু শব্দটিও করে না! তখন মুখে কুলুপ এঁটে, হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকে। এরা কেউ কেউ তখন উট পাখির মতো মুখ লুকিয়ে ফেলে। এরা সোচ্চার হয় অসহায়, সম্বলহীন, দুর্বলের উপর! তখন এদের পুরুষত্ব খুব জেগে উঠেরে মা…!

তুবা মা, ওখানে তোর একটা চাচাও ছিল না যে প্রতিবাদ করে বলবে না মারিস না, আইন ভঙ্গ করিস না! একটা চাচাও তোর মায়ের নিথর দেহের উপরের আঘাতগুলো ফিরায়নি মা…

তোর মাতো তোকে একটুও ব্যথা পেতে দেয়নি কখনো? আঘাত পেলেও হয়তো আদর করে দিতেন খুব করে তাই না? তুই মা নিজের মায়ের নিথর দেহটা ছুঁয়ে একটু আদর করে দিস কেমন! পারলে একটু জড়িয়ে ধরিস মা…যদি পারিস জড়িয়ে ধরে একটু চিৎকার করে কাঁদিস মা…! তাতে তোর ছোট্ট বুকটা একটু হালকা হবে কিনা জানি না আমি..আর কখনো তো জড়িয়ে ধরতে পারবি না মাকে, তাই একটু বেশি করে মমতাময়ী মায়ের দেহটা ছুঁয়ে দিস…

এই কঠিন পৃথিবীতে দুদিন পর সবাই তুবাকে ভুলে যাবে, তোর তো বেঁচে থাকার জন্য একটা স্মৃতি লাগবে তাই না! মায়ের সাথে শেষ স্মৃতিটুকু ধরে রাখিস মা…আমি কিন্তু ওই স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছিরে মা…

মা তোর মায়ের হত্যাকারীরা এখন ঘরে চোরের মতো লুকিয়ে আছে! দেখে দেখে এই খুনকে যারা জায়েজ করেছে তারাও চুপ! তোর মায়ের খুনীরা আইনের আওতায় অবশ্যই আসবে, সেটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কিন্তু এতে আমার কোনো ভালো লাগা, মন্দ লাগা কাজ করছে না! আমি জানি তুই আইন,আওতা কিছুই বুঝিস না। এসবের কোনো মানেও নাই তোর কাছে। আমি শুধু ভাবি রাতে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে তুই যখন মা বলে ডাকবি, তখন কে দাঁড়াবে তোর পাশে? কে তোর ছোট্ট মুখটা তুলে কান্না মুছিয়ে দিয়ে বলবে, আয় তুবা মা, আমার বুকে আয়? এই বিশাল পৃথিবীতে তোর ছোট্ট আকাশকে কে আগলে রাখবে? আমার সাথে সাথে তোর বুকটাও খালি হয়ে গেলরে মা!

আমি যখন কেঁদে কেঁদে মায়ের জন্য বুক ভাসাতাম তখন তোর ছোট্ট বোন আমার বুকে এসে আমার বুকটা ঠাণ্ডা করতো! তোর ছোট্ট বুকটা কার পরশে ঠাণ্ডা হবে রে মা? আমি জায়নামাজে বসে তোর জন্য বারবার কাঁদছি… আমিও হয়তো ব্যস্ততায় তুই তুবাকে ভুলে যাবো, চেষ্টা করবো মনে রাখতে মা… এই পৃথিবীটাকে এর মানুষেরা নোংরা বানিয়ে ফেলছেরে মা! স্বার্থের এই দুনিয়ায় কিছু অসভ্য, বর্বর মাথা তুলে জেগে উঠে অসময়ে! সঠিক সময়ে এরা কখনো জেগে উঠে না মা…

তুবা জানিস, আজ আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী! মহান আল্লাহর কাছে আমার প্রতিটি প্রার্থনায় মায়ের পাশাপাশি তোকেও রাখার চেষ্টা করবো মা… তুই তো আমারও মেয়ে হতে পারতি? এটা ভাবলেই আমার পুরো পৃথিবীটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মা… যেভাবে পারিস নিজের ছোট্ট বুকটাকে ঠাণ্ডা রাখিস! আমি তোর বাবা হলে সারাক্ষণ তোকে আগলে রাখতাম মা, তোর বদনসীব বাবা কী করবেন আমি জানি না!

মহান আল্লাহ পৃথিবীর নোংরা মানসিকতার সকল অমানুষদের থেকে তোকে নিরাপদে রাখুক মা…

তুই আমাদের মাফ করিস না তুবা, আমাদের অভিশাপ দিস! তোর অভিশাপে ধ্বংস হয়ে যাক সকল অমানুষের দল…

ইতি

তোর পুলিশ চাচ্চু

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877