স্বদেশ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ‘সন্দেহভাজন আইএস সদস্যের গাড়ি’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে দাবি করলেও দেশটির প্রথম সারির দুটি সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, ওই হামলায় আইএসের কেউ নয়, প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ ১০ আফগান। এদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। সবাই এক পরিবারের।
নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনুসন্ধান চালিয়ে এ তথ্য বের করেছে। তাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ওই হামলায় নিহতরা কেউ আইএস জঙ্গি ছিল না।
১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর চরম অস্থিরতা তৈরি হয় দেশটিতে। ভয় আর আতঙ্কে দেশ ছাড়তে হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে ভিড় করেন। গত ২৬ আগস্ট বিমানবন্দর গেটের কাছে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ১৭৫ জন নিহত হন। আহত হন আরও দেড়শর মতো মানুষ। নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ সেনা সদস্যও ছিলেন। এ হামলার দায় আইএস স্বীকার করে। এর পরপরই কাবুলের দুই জায়গায় আইএস জঙ্গিদের অবস্থান সন্দেহে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
২৯ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় কাবুল বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, সন্দেহভাজন আইএস সদস্যের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং ওই ব্যক্তি বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের তদন্তের রিপোর্টে গাড়িচালকের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম জেমারি আহমাদি। ৪৩ বছর বয়সী এ প্রকৌশলী আফগানিস্তানে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সংস্থা নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালে কাজ করতেন। তার স্বজনদের দাবি, আহমাদি ও তার পরিবারের আরেক সদস্য মার্কিন সেনাদের কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছিলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে যাওয়ার জন্য আবেদনও করেছিলেন।
আহমাদির পরিবার ও সহকর্মীরা আরও জানান, যে গাড়িটি আহমাদি চালাতেন, সেটি নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের। ২৯ আগস্ট তিনি বিভিন্ন স্থানে যান তার কাজের জন্য। এর মধ্যে ছিল তার বসের ল্যাপটপ নেওয়া ও সহকর্মীদের পৌঁছে দেওয়া। মার্কিন নজরদারি ড্রোন যে ভারী বস্তু তিনজনকে গাড়িতে ভর্তি করতে দেখেছিল, সেগুলো মূলত পানির কনটেইনার ছিল। কাবুলে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় অফিস থেকে পানি নিচ্ছিলেন আহমাদি।
২৯ আগস্ট আহমাদি যখন বিমানবন্দরের কাছে তার বাসায় ফিরছিলেন, তখন মার্কিন ড্রোন থেকে তার গাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। মার্কিন ড্রোন অপারেটর ওই সময় গাড়ির কাছে কেবল একজনকে দেখতে পান। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, আহমাদির স্বজনদের ভাষ্যে, আহমাদি আঙিনায় পৌঁছলে তার ও ভাইয়ের ছেলেরা বের হয়ে আসে এবং গাড়িতে চড়ে বসে।
হামলায় নিহত এক শিশুর ভাই বলেন, আমরা সাধারণ একটি পরিবার ছিলাম। আমরা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএসআই) নই। এটা আমাদের পারিবারিক বাড়ি ছিল।