এ দেশের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও অংশের মানুষের মধ্যে ‘সম্পদ-বৈষম্যের’ মাত্রা এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ‘সম্পদের সুষম বণ্টন’ ছিল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত ভিত্তি ও স্বপ্ন। কথা ছিল, স্বাধীন দেশে বিভিন্ন শ্রেণি ও অংশের মানুষের মধ্যে পাকিস্তান আমলের মতো বৈষম্য থাকবে না। সমাপ্ত হবে ‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না’র যুগ। ‘বৈষম্যের’ পথ থেকে ‘সাম্যের’ পথে ‘এবাউট টার্ন’ করার জন্য বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারত।
সে ক্ষেত্রে বাজেটকে হতে হতো প্রগতিশীল ও গরিব-স্বার্থ অভিমুখী। অর্থাৎ বাজেটে গরিব-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত রাজস্বের পরিমাণের চেয়ে, তাদের জন্য তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হতো। অথচ তাদের কাছ থেকে আদায়কৃত রাজস্বের কেবল অর্ধেকটা তাদের স্বার্থে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়। সেটুকুর ওপরও আবার ভাগ বসায় ক্ষমতাবান ও দুর্নীতিবাজ বিত্তশালীরা। ফলে সমাজে বিত্তবানদের হাতে ইতোমধ্যে যে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ জমা হয়ে আছে তা দরিদ্র-নিরন্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে স্থানান্তরিত হওয়ার বদলে, বরং উল্টা সাধারণ মানুষের সম্পদ ক্রমাগতভাবে বিত্তবানদের হাতে আরও বেশি বেশি পরিমাণে চলে যাচ্ছে। এ বছরের বাজেটে আয়ের প্রধান উৎস যে দেশের আপামর গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষ, তা আগেই (আগের কিস্তিতে) আলোচিত হয়েছে।
এবার বাজেটের ব্যয় বরাদ্দের কয়েকটি দিকের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাক। খুব সরল একটি হিসাব হলো, এবারের বাজেটের মোট ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা যদি ১৭ কোটি দেশবাসীর মধ্যে জনে-জনে সমানভাবে বণ্টন করা হতো, তা হলে কোলের শিশু থেকে থুরথুরে বুড়ো মানুষটা পর্যন্ত প্রত্যেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে হাতে পেত। অর্থাৎ ৫ জনের একটি পরিবার গড়ে বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে পেত। প্রশ্ন উঠতে পারে, সব টাকা যদি এভাবে জনে-জনে বিলি করে দেওয়া হয় তা হলে সর্বসাধারণের স্বার্থে অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় কাজগুলো চলবে কীভাবে? ঠিক কথা! ধরলাম যে, এসব অপরিহার্য খরচগুলোর জন্য বাজেটের ৪০ শতাংশ না হয় আলাদা করে রাখা গেল। তা হলেও প্রতিটি পরিবারের বার্ষিক ৯০ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা।
কিন্তু সরকার যে নীতিতে বাজেট পরিচালনা করছে, তাতে করে নগদে অথবা পণ্য বা সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ গরিব-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তার অতি ক্ষুদ্রাংশও পাচ্ছে না। তা হলে তাদের সেই প্রাপ্য টাকা যাচ্ছে কার কাছে? অর্থমন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ হবে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত প্রবৃদ্ধি আরও কম হবে। মন্ত্রী মহোদয়ের আশ্বাসকে যদি সঠিক বলেও ধরে নেওয়া হয়, তা হলেও উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার সত্ত্বেও সমাজে সম্পদের বৈষম্যমূলক বিন্যাস অব্যাহতই থাকবে এবং তা আরও বাড়বে। প্রবৃদ্ধির সুফল বিত্তবানদের ঘরে যে মাত্রায় ও অনুপাতে পৌঁছাবে, গরিব-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছবে তার তুলনায় অতিনগণ্য অনুপাতে।
ফলে বৈষম্যের মাত্রা আরেক দফা বৃদ্ধি পাবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, এবার মুদ্রাস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের নিচে থাকবে। অবশ্য প্রতিবছর মুদ্রাস্ফীতির প্রকৃত হার তার ঘোষিত হারকে বহুল পরিমাণে ছাড়িয়ে যায়। তদুপরি মুদ্রাস্ফীতির জাতীয় হার যেটি থাকে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য ও গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির হার ও পরিমাণ হয় তা থেকে অনেক বেশি। এই বিবেচনায় এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, সাধারণ মানুষের জীবনে যে নগণ্য পরিমাণে প্রবৃদ্ধির হাওয়া এসে লাগবে, তাদের কাছে তার চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠবে মুদ্রাস্ফীতির বাস্তব অভিঘাত। ফলে নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ার অভিশাপ অব্যাহত থাকবে এবং দরিদ্রদের আপেক্ষিক দারিদ্র্য বেড়েই চলবে।
বাজেট বরাদ্দ সম্পর্কে দেশের বামপন্থিরা বরাবর বলে এসেছে, জাতির সাধারণ স্বার্থ ও গরিব-মধ্যবিত্ত আপামর জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে বাজেটের অর্থ মোটা দাগে সমান চার ভাগে ভাগ করে খরচ করা উচিত। সেই চারটি ভাগ হলো-(১) প্রশাসনিক ব্যয় (২) অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যয় (৩) শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সামাজিক কল্যাণে ব্যয় এবং (৪) সরাসরি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাবদ ব্যয়। সম্ভাব্য খরচের হিসাব এভাবে সাজিয়ে নিয়ে এবং তৃণমূল থেকে পরিকল্পনার ধারা সূচিত করে যদি রাজস্ব বাজেট ও উন্নয়ন বাজেট সমন্বিতভাবে প্রণয়ন করা যায় তবেই সমতার ধারায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হতে পারে।
কিন্তু বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ না করে যেনতেন উপায়ে ধন-সম্পদ যেন গুটিকয়েক বিত্তবানদের মালিকানায় কেন্দ্রীভূত হতে পারে সেজন্য ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির’ পুঁজিবাদী দর্শনের ‘নয়া উদারবাদী ধারা’ অনুসরণ করে চলেছে। প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার অর্জন এবং ‘দ্রুত উন্নয়নের’ প্রয়োজনে পুঁজি গঠনের স্বার্থে এ পথ গ্রহণ করা হয়েছে বলে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু ‘সম্পদের কেন্দ্রীভবন’ ও ‘পুঁজি গঠন’-এ দুটি বিষয় এক নয়। ৪৫ বছর ধরে অনুসরণ করতে থাকা এই পথে লুটপাটের অবাধ সুযোগ তৈরি করে দিয়ে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বিপুল সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটানো সম্ভব হলেও তার খুব অল্প অংশই পুঁজিতে রূপান্তরিত হয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে। বেশিরভাগই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে অথবা ভোগবিলাসে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
ফলে লুটপাট হচ্ছে দেদার, কিন্তু উৎপাদনশীল বিনিয়োগ সেভাবে বাড়ছে না। বাজেট বরাদ্দের কয়েকটি বিশেষ বিষয়ের প্রতি এবার নজর দেওয়া যাক। এবারের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ৬.১ শতাংশ বরাদ্দ হিসেবে দেখালেও এই খাতের অনেক খরচ অন্যান্য খাতে ঢুকিয়ে দিয়ে ‘কায়দা করে’ প্রকৃত ব্যয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবারের মতোই এবারও এই ‘ফাঁকিবাজির’ আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। জনকল্যাণের কাজের জন্য বরাদ্দ করতে সব সময় ‘টাকা নেই’ বলা হলেও সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রভৃতি রাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক কাজের জন্য কিন্তু বিপুল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারি বেতন-ভাতা-পেনশন ইত্যাদি বাবদও বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য প্রায় ১১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এই দুটি ক্ষেত্র দখল করে আছে রাজস্ব খাতের ৪২.৩ শতাংশ বরাদ্দ। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যারা সরকারি তহবিল থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন তাদের সংখ্যা দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ। আর ঋণের সুদ প্রদানের দ্বারা যেসব ব্যাংক মালিক ও কর্মচারীদের আয়ের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে তাদের সংখ্যাও অতিনগণ্য। সুতরাং রাজস্ব ব্যয়ের একটি প্রধান অংশ থেকে সাধারণ মানুষকে প্রথমেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষির সঙ্গে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জড়িত। এই খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ দিয়ে বহুলাংশে অনুমান করা যায় সাধারণ মানুষের সপক্ষে আয়-পুনর্বণ্টনে সরকারের আগ্রহের মাত্রা। বাজেটে কৃষি খাতে নামমাত্র ৫.৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কৃষককে এবার পানির দামে বোরো ধান বেচে দিতে হয়েছে।
সরকার তার নির্ধারিত ১,০৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনেনি। অজুহাত দিয়েছে, ধান কিনে রাখার জায়গা নেই। দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে ১ কোটি করে টাকায় একেকটি করে খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ করলে ভবিষ্যতে এ সমস্যার নিরসন অনেকটাই সম্ভব হতো। কৃষক বছর-বছর বঞ্চিত হওয়া থেকে রেহাই পেত। এজন্য যে ৪,৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন তা বাজেটের মাত্র ১ শতাংশেরও কম। অথচ বাজেটে এজন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। কৃষকের জন্য সরকার ঘোষিত সুবিধাগুলোর একটি বড় অংশ চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি, কারচুপি, ভুয়া তালিকা ইত্যাদির কারণে ‘সিস্টেম লস’ হয়ে তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
তা ছাড়া কৃষক তার উৎপন্ন পণ্যের ন্যায্য দাম পায় না। চূড়ান্ত ভোক্তা যে দামে কৃষিপণ্য কিনে, তার মাত্র একটি ভগ্নাংশ তারা পায়। বাকি অংশ যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট থেকে সে টাকা ‘পুঁজিবাদী বাজারের চ্যানেল’ ধরে চলে যায় উঁচুতলার বিত্তবানদের হাতে। উপরন্তু অর্থনীতিতে কৃষিপণ্যের আপেক্ষিক বিনিময় হার ক্রমাগতই তার প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। এভাবে কৃষকের জন্য প্রত্যক্ষ সহায়তার টাকাও শেষ পর্যন্ত পরিণত হচ্ছে বিত্তবানদের পরোক্ষ ভর্তুকিতে। বাজেটে লোক দেখানো বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও অনুদানের জন্য বরাদ্দ রেখে ঢাকঢোল পিটিয়ে সেটিকে ‘গরিববান্ধব বাজেট’ বলে বাহাবা নিতে সরকার প্রতিবারের মতো এবারও সচেষ্ট হয়েছে। কিন্তু এজন্য অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ যৎসামান্য। সে ক্ষেত্রেও দলবাজি, দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে তার সবটা দুস্থ মানুষের কাছে পৌঁছে না। এর থেকে বড় কথা হলো, ‘অনুদান’ বা ‘ভাতা’ নিয়ে বাঁচতে হবে সেজন্য দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, লাখো শহীদ বুকের রক্ত দিয়েছে, ‘নিজেদের শ্রমলব্ধ সম্পদের ওপর পূর্ণ অধিকার’ প্রতিষ্ঠার জন্য। শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দও সাধারণ মানুষের স্বার্থ হাসিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারত। সে খাতে বরাদ্দ ১৫.২ শতাংশ তথা সর্বোচ্চ বলে দেখাতে গিয়ে এবার আবার চরম ভাঁওতাবাজির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি খাতকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে এবং প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলোকে ‘শিক্ষার’ ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করে, শিক্ষা বাজেটকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ‘বড়’ দেখানো হয়েছে। বস্তুত শিক্ষার মৌলিক কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ আসলে কমানো হয়েছে। দেশের একটি বড় অংশের মানুষ হলো গ্রাম ও শহরের মজুর শ্রেণি। তাদের জন্য জাতীয় নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন আজ শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্নের সমতুল্য হয়ে উঠেছে।
বাজেটে ওপরতলার অল্পসংখ্যক বড় বড় অফিসারসহ সরকারি কর্মচারীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা থাকলেও শ্রমিকদের রেশনিং, বাসস্থানের ব্যবস্থা, আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো কথা নেই। উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন ও তৃণমূলে উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে প্রসারিত করার জন্য প্রশাসনের গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ একটি আবশ্যিক শর্ত। বামপন্থিরা আগাগোড়াই এ ক্ষেত্রে বাজেটের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ অর্থ সংবিধিবদ্ধভাবে বরাদ্দ রাখার জন্য বলে এলেও বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নের জন্য মাত্র ৭.২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটের মাত্র ৪.৯ শতাংশ। রেল ও নৌপথ হতে পারে সাধারণ মানুষের জন্য সস্তায় ও নিরাপদে যাতায়াতের মাধ্যম। বাজেটে এজন্য নিতান্তই নগণ্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সংস্কৃতি খাতের সঙ্গে বিনোদন ও ধর্মবিষয়ক কাজকে যুক্ত করে সেজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ০.৯ শতাংশ।
বাজেটে এ ধরনের সাধারণ মানুষের সরাসরি স্বার্থানুকূল কাজের জন্য বরাদ্দের ‘টাকার অভাব’ রয়েছে বলে যুক্তি দেখালেও বিত্তবানদের জন্য কর রেয়াত ও অন্যান্য সুবিধাসহ ‘ছাপ্পর ভরে’ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দের পর্যালোচনা করলে তাই স্পষ্টই দেখা যায়, যারা বাজেটের ৭৫ শতাংশ রাজস্বের জোগান দেয়, সেই গরিব-মধ্যবিত্ত আপামর জনগণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে বাজেটের মাত্র ২৫ শতাংশ অর্থ। আর যে বিত্তবানদের জন্য ২৫ শতাংশের বেশি বরাদ্দ হওয়া উচিত নয় তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫ শতাংশ অর্থ। যারা বাজেটে তুলনামূলক ‘বেশি’ অর্থ জোগান দিচ্ছে তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ‘কম’। আর যারা সামর্থ্যরে অনুপাতে ‘কম’ দিচ্ছে তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ‘বেশি’। এবারও এটিই হলো বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্য।
এবারের বাজেট প্রস্তাবের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে বলতে হয়, এটি হলো প্রতিবারের মতোই ‘খায়দায় ফজর আলী আর মোটা হয় জব্বার।’ কিংবা ‘ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাসে’ মার্কা একটি বাজেট। বছর-বছর ধরে বাগডাসের এই লোলুপ আনন্দভোজের ইতি ঘটানোর এখন সময় এসেছে। সেজন্য সাধারণ মানুষকেই সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে ‘বিকল্পধারার বাজেট’ রচনার শক্তিকে জোরদার করে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। য় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি