স্বদেশ ডেস্ক:
প্রায় গোটা আফগানিস্তান এখন তালেবানের দখলে। কিন্তু তার পরও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সরকার গঠন করতে তালেবানদের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। রাজধানী কাবুল দখলের পর পরই তালেবান নেতৃবৃন্দ জানিয়েছিলেন- তারা সবার অংশগ্রহণে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠন করতে চায়। প্রায় দুই সপ্তাহ পর গতকাল সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সূত্রের বরাত দিয়ে একই কথা জানিয়েছে। কিন্তু সবার অংশগ্রহণে কেমন সরকার হতে যাচ্ছে তা নিয়ে পরিষ্কার করেননি তালেবানরা।
তালেবানের সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যাবে, যেখানে সব জাতিগোষ্ঠীর সদস্যের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ থাকবে। সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রায় এক ডজনের মতো নেতৃবৃন্দের নাম ইতোমধ্যে নতুন সরকারে তালিকাও করা হয়েছে। তবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা বলা হয়নি।
আফগানিস্তানকে আর দশটি দেশের সঙ্গে মেলালে দেশটির বাস্তবতা আঁচ করা যাবে না। দেশটিতে জাতিগত বৈচিত্র্য সব সময় কেন্দ্রের রাজনীতিতে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। পশতুনরা হলো আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠী। তারা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪২ শতাংশ। কিন্তু সুন্নি মুসলিমরাও পশতু ভাষায় কথা বলেন, তারা আফগান রাজনীতিতে ১৮ শতক থেকেই প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
তালেবানের সূত্র জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে একজন ‘আমির-উল-মুমেনিন’ থাকবেন, যিনি ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তানের নেতৃত্ব দেবেন। বলা হচ্ছেÑ সর্বোচ্চ নেতা ভবিষ্যৎ সরকার কাঠামো ঠিক করবেন এবং মন্ত্রীদের মনোনীত করবেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যেমনÑ বিচার বিভাগ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রবিষয়ক, অর্থ ও তথ্য বিষয়ে পৃথক পৃথক মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
খবরে বলা হয়, তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদার এখন রাজধানী কাবুলে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব যিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা উমরের ছেলে কান্দাহার থেকে কাবুলে যাচ্ছেন। ওই সূত্র আল জাজিরাকে আরও জানান, তালেবানরা চাইছেন, নতুন সরকারে তাজিক ও উজবেক নেতৃবৃন্দ যোগ করা হোক। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- নতুন সরকারে কিছু সদস্য পুরনো সরকার থেকেও গ্রহণ করা হোক। এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, পদচ্যুত সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর নাম ঘুরেফিরে আসছে। আব্দুল্লাহর ফেসবুকে পেজে কয়েক দিন থেকেই দেখা যাচ্ছে, তিনি বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, তার সঙ্গে হামিদ কারজাইকেও দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে তালেবানকে অনেক বেগ পেতে হবে। ইতোমধ্যে আর্থিক খাতে ধস নেমেছে। পশ্চিমা দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জরুরি ওষুধ ও খাদ্যের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো জঙ্গিরা তালেবানের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে।