রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

কবিতা লেখা ইমারত তৈরির মতো : নিকোলাই গুমিলিয়েভ

কবিতা লেখা ইমারত তৈরির মতো : নিকোলাই গুমিলিয়েভ

দুলাল আল মনসুর: বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাহিত্য সমালোচক, কাব্য-তাত্ত্বিক, অনুবাদক এবং সর্বোপরি কবি নিকোলাই স্তেপানোভিচ গুমিলিয়েভের জন্ম ১৮৮৬ সালে। ১৯১৭ সালের বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ায় নিরীক্ষাধর্মী কবিতা লেখার মাধ্যমে তিনি অনেকের ওপরই প্রভাব ফেলেন। ১৯১০ সালে তিনি দার্শনিক, নাট্যকার, সমালোচক এবং প্রতীকবাদী কবি ভায়াস্রোভ ইভানভের বাড়ির সাহিত্য আড্ডায় নিয়মিত যাতায়াত করেন এবং তার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিজের কবিতায় প্রয়োগ করেন গুমিলিয়েভ।
ছাত্রজীবনেই তার পরিচয় হয় আনা গোরেনকোর সঙ্গে। পরে আনা গোরেনকোর কবি নাম হয় আনা আকমাতোভা। ১৯১০ সালে তাদের বিয়ে হয়। তখন থেকেই কবি ও সমালোচক হিসেবে সেন্ট পিটার্সবার্গের সাহিত্যমহলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন গুমিলিয়েভ। বিশেষ করে কবিতার তত্ত্বে তার আগ্রহ বেশি দেখা যায়। নতুন সাহিত্য আন্দোলন আকমেইজম শুরুর পেছনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। মরমিবাদের প্রতি সাড়া দিতে গুমিলিয়েভ এবং তার সমসাময়িক কবিদের কয়েকজন কবিতায় স্বচ্ছতা আনার প্রয়াসে এই আন্দোলন শুরু করেন। তাদের আন্দোলন সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং রুশ কবিতায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। তারা মনে করেন, স্থাপত্যবিদ্যার মতো কবিতায়ও শিল্পকলার প্রয়োগ দরকার। তাদের আদর্শের প্রতিফলন দেখা যায় গুমিলিয়েভের ‘মুক্তা’ ও ‘অন্য আকাশ’ কবিতা সংকলনে।
১৯১৮ ও ১৯২১ সালের কবিতায় দুই রকমের সত্তার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় গুমিলিয়েভের কবিতায়; এক দিকে আবেগের চাপা উত্তেজনা, অন্য দিকে দিব্য দৃষ্টি। তার ‘পথহারা ট্রাম’ কবিতায় তেমনটিই দেখা যায়। বিশ শতকের সেরা কবিতার অন্যতম মনে করা হয় তার এই কবিতাকে। ‘ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়’ কবিতায় তিনি উচ্চারণ করেন :
আমাদের প্রেমে মত্ত মদ, বাহ কী চমকপ্রদ;
উনুনের রুটির জন্য থাকি অপেক্ষায়,
যে নারী একসময় আমাদেরই হয়ে যায়,
তারই বোঝা একসময় আমরা টেনেছি অবিরত।
তার সমসাময়িকদের অনেকেই বলশেভিক ক্ষমতার সমর্থক ছিলেন; কিন্তু তিনি তাদের থেকে আলাদা ছিলেন। তিনি বরং বিপ্লবের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। সমাজতন্ত্রের বিস্তারের প্রতি তার অবজ্ঞা প্রকাশ করে লেখেন কল্পনার যথেচ্ছ স্বাধীনতার কবিতা সংকলন ‘আগুনের থাম’। এখানকার কবিতায় তিনি সমাজতন্ত্রের প্রতি গভীর ঘৃণা প্রকাশ করেন। ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির ওপর সমাজতন্ত্রের গুরুত্বারোপের বিষয়টিও তার অপছন্দের ছিল। তেমনই এসেছে এখানকার কবিতাগুলোয়। ‘তাঁবু’ কবিতায়ও সমাজতন্ত্রের প্রতি এ রকম মনোভাব প্রকাশ করেন গুমিলিয়েভ।
১৯২১ সালে গ্রেপ্তার হন। বিচার ছাড়াই তাকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর সময় থেকে দীর্ঘদিন তার কবিতা প্রকাশে বাধা ছিল। ‘একটি নীল তারার প্রতি’ একটি ব্যতিক্রমী কবিতা মাত্র। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ তার কবিতা প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। অনেক দিন পর রাশিয়ার পাঠকরা এমন একজন অসাধারণ কবির সঙ্গে তাদের পরিচয় নবায়ন করতে পারেন। তার সম্পর্কে আর্ল স্যামসন বলেন, ‘তার কবিতাই বলে দেয়, তার কবি প্রতিভা বিকাশের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শুধু পৌঁছেছিলেন তিনি; তার আরো নতুন নতুন সৃষ্টিপথ তৈরি করার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার জীবন এমন একটা পর্যায়ে এসে থেমে গেল।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877