মুহম্মদ আকবর :
আজ ২১ আগস্ট। আজ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ঘৃণ্যতম ও নৃশংসতম এক দিন; রক্তাক্ত ভয়াল বিভীষিকাময় হত্যা ও চক্রান্তের এক দিন; নারকীয়তায় বর্বরতায় কলঙ্কিত এক দিন। ১৭ বছর আগে, ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশে’ পৈশাচিক গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ ঘটনায় দলটির ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন, আহত হন আরও পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। তৎকালীন এই বিরোধী দলটির নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই হামলায় প্রাণে রক্ষা পেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৭ বছর আগে এই দিন বিকেল ৩টা থেকে দলটির নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হতে থাকেন। বিকাল ৫টার দিকে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন শেখ হাসিনা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রায় ২০ মিনিট বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ভাষণ শেষে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার’ উদ্বোধন ঘোষণার মুহূর্তে সন্ত্রাসীরা নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে মুহূর্তের মধ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। পুরো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। গ্রেনেড হামলার সময় মঞ্চে বসা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনার চারপাশে ঘিরে মানবঢাল তৈরি করেন। চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় পড়ে থাকে সারি সারি মানুষ। মানুষের গোঙানি আর কাতর চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। সেদিন আহত নেতাকর্মীদের অনেকেই আজও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রেনেডের স্প্লিন্টার, এখনও ভোগ করছেন দুর্বিষহ যন্ত্রণা।
২১ আগস্টের হামলার সময় পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও চিকিৎসকের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ আছে, আহতদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে পুলিশ উল্টো তাদের হেনস্তা করে। চিকিৎসকরা চিকিৎসা না দিয়ে আহতরা যেন চিকিৎসাহীন থাকেন সে তৎপরতা চালিয়েছেন। ওই সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারের ভূমিকা নিয়েও নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন রয়েছে। গ্রেনেড হামলার পর তদন্তে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে।
জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় পুনরায় তদন্ত হয়। সেই তদন্তে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর নাম বেরিয়ে আসে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে পুনরায় এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্তে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ওই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নাম উঠে আসে।
ইতিহাসের বর্বরোচিত এই গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আমিনুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া প্রমুখ।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনিসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
আজকের দিনের কর্মসূচি
নিহতদের স্মরণে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং সাড়ে ১০টায় একই স্থানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এ জনসভায় অংশ গ্রহণ করবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।