শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নির্বাচনের পর বাড়ি ফিরেই মারধরের শিকার বিএনপিকর্মী মেয়ের জন্য বিশেষ আয়োজন পরীর মাস্টার্সেও পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কথা ভাবা হচ্ছে: ঢাবি উপাচার্য নৈরাজ্য করলে ডাবল শিক্ষা পাবে বিএনপি, আমরা বসে নেই: ওবায়দুল কাদের জেলেনস্কিকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে উত্তাল ইউক্রেন ‘শয়তানের নিঃশ্বাস‘ নামের যে ড্রাগ প্রতারণায় ব্যবহার হচ্ছে দস্যুর দখলে লক্ষ্মীপুরের দ্বীপ চর মেঘা, বিপাকে দেড়শতাধিক কৃষক নিজ বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত পাইলট আসিম জাওয়াদ মালদ্বীপ থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করেছে ভারত বাংলাদেশের জন্য মনোনীত মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত মিল আগে যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন
ট্যানারি বন্ধ হলে চামড়ায় আরও বিপর্যয়ের শঙ্কা

ট্যানারি বন্ধ হলে চামড়ায় আরও বিপর্যয়ের শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

মহামারী করোনার সংক্রমণরোধে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও কোরবানির ঈদ ঘিরে লকডাউন ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু ঈদের পরের দিন থেকে আবার কঠোর লকডাউনের আওতায় আসবে। সে সময় শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে এখন পর্যন্ত অটল সরকার। লকডাউনে ট্যানারি ও রপ্তানি শিল্প বন্ধ থাকলে চামড়ায় আরও বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমার পাশাপাশি কমছে দাম। অন্যদিকে আর্টিফিশিয়াল লেদারের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক দিন দিন বাড়ছে। ফলে চামড়ায় বিপর্যয় ঘটছে। এর ফলে মূলত গরিবের হক নষ্ট হচ্ছে। চামড়ার দাবিদার গরিব মানুষেরা হচ্ছেন হক বঞ্চিত।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছে, হাজারিবাগ থেকে হঠাৎ করে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের কঠোর সিদ্ধান্ত এ শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া পল্লীতে কোনো কাজ না করেই হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো সিলগালা করা হয়। হাজারিবাগকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে ক্রেতা হারাতে থাকেন তারা। একই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের বোঝা আর সাভারেরর চামড়া পল্লী প্রস্তুত না হওয়ায় অবিক্রীত হয়ে পড়ে মণকে মণ চামড়া।

এসব কারণেই প্রত্যেক বছরেই ধারাবাহিকভাবে কমছে চামড়ার দাম। কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে চলছে চরম নৈরাজ্য। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে গত দুবছর ধরে। বিক্রি করতে না পেরে পশুর চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়া ও মাটির নিচে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া নিয়ে শঙ্কা আরও প্রকট হয়েছে। তবে চামড়ার দাম না থাকলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। বিগত সাত বছরে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৩০০ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন কোনো পণ্যের উৎপাদনের দাম কমে যায়, ওই পণ্যটিরও দাম কমা উচিত।

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রস্তুতকৃত (ফিনিশড) চামড়ার দাম কমছে, এমন অজুহাতে গত কয়েক বছর ধরেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমাচ্ছে সরকার। তবে এ বছর লবণযুক্ত চামড়ার দাম ফুটে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। কিন্তু বাড়তি ৫ টাকা লবণেই চলে যাবে। তার অর্থ হচ্ছে- গতবছরের মতোই দাম থাকছে চামড়ায়।

এদিকে সম্প্রতি অনলাইনে জুম প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে চামড়া ব্যবসায়ীদের বৈঠকে দাম নির্ধারণ করা হয়। সভাশেষে এ দাম ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এতে দেখা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার গরুর চামড়ায় প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা আর ছাগলের চামড়ায় ২ টাকা বেড়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছর যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একই চামড়া ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; গত বছর যা ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা।

এ ছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা; গত বছর ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। পাশাপাশি প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা, গত বছর যা ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা। সব ক্ষেত্রেই দাম বাড়ানো হয়েছে।

বছরভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। পরের বছর একবারে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ৫০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২০১৬ সালে এ চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালে আবারও কমিয়ে তা ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। তবে ২০১৯ সালে এ দর অপরিবর্তিত থাকলেও চামড়া ব্যবসায়ীরা তা মানেননি। ২০২০ সালে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৩-১৫ আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা।

গরিব ও এতিমদের হক চামড়ার দাম নিয়ে গত বছরের কারসাজি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ৩১ বছরের মধ্যে গতবার কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়ার দরে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে আসে। দাম না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন।

এদিকে কয়েক বছর ধরেই চামড়া খাতের রপ্তানি আয় একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও চামড়ার জুতার রপ্তানি আয় ছিল ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় নেমে আসে প্রায় ১০২ কোটি ডলারে। আর করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের সর্বশেষ হিসাব বছরে এ খাতের আয় ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ফিনিশড চামড়া রপ্তানি থেকে আয় ছিল ৫০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এর পর থেকে প্রতি বছরই চামড়ার রপ্তানি কমছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ফিনিশড চামড়ার রপ্তানি আয় ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৮ কোটি ৩১ লাখ ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলারে নেমে আসে। গত সাত বছরে ফিনিশড চামড়ার রপ্তানি আয় ৮০ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছে।

এদিকে কাঁচা চামড়ার বিপর্যয় ঠেকাতে ৩০ বছর পর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মোট এক কোটি বর্গফুট ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা প্রধান আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানকে চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

পশুর শরীর থেকে প্রথমে চামড়া ও পরে পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর যে চামড়া পাওয়া যায় তাকেই ওয়েট ব্লু চামড়া বলা হয়। ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত এ ধরনের চামড়া বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হতো। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব সময় চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান ও স্পেনের মতো দেশে ‘ক্রাস্ট’ ও ‘ফিনিশড লেদার’ রপ্তানি হয়ে আসছে। সেখানে অবশ্য ধস নেমেছে কিছুটা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহায় পশুর কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে গত বছর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুপারিশ করেছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ওই সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ট্যানারি ও রপ্তানিমুখী শিল্পকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখতে আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। লকডাউনের আওতার মধ্যে ট্যানারিশিল্প পড়লে চামড়াশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, লকডাউনে ট্যানারি বন্ধ থাকার ঘোষণা শোনার পরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রাম পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহে অনীহা প্রকাশ করবে। তারা আগ্রহ হারাবে এ কারণে যে, কাঁচা চামড়া নিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হবে। চামড়া সংগ্রহ করে কোথায় রাখবে? এমন চিন্তায় তারা চামড়া সংগ্রহ করবে না। এ কারণে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমছে। অন্যদিকে আর্টিফিশিয়াল লেদারের প্রতি মানুষ ঝুঁকছে। এ ছাড়া সাভারের হেমায়েতপুর চামড়াপল্লী প্রস্তুত না করেই ট্যানারিগুলো স্থানান্তর এ শিল্পকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে।

জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর আমাদের সময়কে বলেন, কাঁচা চামড়ার দাম কম এটা ঠিক কিন্তু পণ্য প্রস্তুত করতে অনেক খরচ পড়ে যায়। পণ্য প্রস্তুত করতে যেসব কেমিক্যাল ও সরঞ্জাম প্রয়োজন তার দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। এ কারণেই কাঁচা চামড়ার তুলনায় প্রস্তুতকৃত পণ্যের দাম বেশি পড়ে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877