মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

ধসে পড়া ঘর মেরামতেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

ধসে পড়া ঘর মেরামতেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

স্বদেশ ডেস্ক:

মুজিব বর্ষে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর ধসে পড়ার পর তা তড়িঘড়ি করে মেরামত শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে নিয়োগ করা ঠিকাদারের লোকজন দিয়ে ফাঁটল ধরা ও ধসে পড়া দেয়াল এবং কাত হয়ে পড়া ও ভেঙে যাওয়া পিলার মেরামত শুরু করেছে। কিন্তু, এসব ঘরবাড়ি মেরামতে এবার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেছেন, মেরামত করতে গিয়ে কোনো অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর হাতে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন মেহেন্দিগঞ্জের হতদরিদ্ররা। কিন্তু, সেসব ঘর ধসে পড়ায় তাদের আশ্রয় নিতে হয় অন্যের ঘরে। এ পরিস্থিতিতে টিউবওয়েল না থাকায় তারা সুপেয় পানির অভাব এবং জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়েছেন।

জানা গেছে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৩১৭টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৫২টি ঘর। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৫টি ঘর এখন নির্মাণাধীন। প্রথম পর্যায়ে গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের কাঠের পোল এলাকায় দুটি ক্লাস্টারে ৪০টি ঘর ও জমি কাগজপত্রসহ সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। একটি ক্লাস্টারের ১৬টি ঘরের মধ্যে দুটি ঘরের বেশিরভাগ দেয়াল ধসে পড়েছে।

অন্য ১২টি ঘরের কোনোটির দেয়াল ও ফ্লোর ফাঁটল ধরেছে এবং বারান্দার পিলার ভেঙে গেছে। অপর ক্লাস্টারের ১৪টি ঘরের একটির রান্নাঘর ও টয়লেট-বাথরুমের দেয়াল ধসে পড়েছে। অপর একটি ঘরের রান্নাঘর ও বাথরুম কাত হয়ে গেছে। সেখানে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ডোবায় বালু ভরাট করে সেখানে একটি ক্লাস্টারের ১৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। সম্প্রতি বন্যা ও জোয়ারের পানিতে ওই বালু ধুয়ে ক্লাস্টারের দুটি ঘরের বেশিরভাগ দেয়াল ভেঙে পড়েছে। অন্য ১২টি ঘরও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে এই ঘর পূনঃনির্মাণে স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত ঠিকাদারের লোক ঠেলাগাড়ি ভরে ইট-বালু আনছেন। ইটগুলো বাজারের এক নম্বর নয়। এর আগে ৩ নম্বর ইট দিয়ে কাজ করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীরা। ঘরগুলোর ভিত করা হয়েছিল বালুর তৈরি ভিটি লেভেল থেকে মাত্র ১ ফুট নিচ পর্যন্ত মাত্র ১০ ইঞ্চি ইটের গাথুনিতে। ইট বিছিয়ে সোলিং না করেই ভিটির উপর পলিথিন বিছিয়ে ১ ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ হয় এসব ঘরের ফ্লোর।

নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, মো. জহির নামে এক ঠিকাদার এই কাজ বাস্তবায়ন করেছে। তার নির্দেশে তারা ভাঙা ঘর মেরামত করছেন। তাদের সহায়তা করছেন সুবিধাভোগীরা।

অদূরে আরেকটি ক্লাস্টারে গিয়ে দেখা যায়, ১৪টি ঘরের মধ্যে একটির রান্নাঘর ও টয়লেট-বাথরুমের দেয়াল ধসে পড়েছে, অপর একটি ঘরের রান্নাঘর ও বাথরুম কাত হয়ে গেছে। অন্য দুটি ঘরের দেয়াল এবং ফ্লোরে ফাঁটল ধরেছে। সেখানেও ঠিকাদারের লোকজন ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করছেন। উপহারের ঘর ভেঙে যাওয়ায় ওই পরিবারগুলো অন্যের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছিলেন। সেই ঘরে উঠতে না উঠতেই ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে। এখন এই ঘরে থাকার উপায় নেই। ঘর নির্মাণের সময় সরকারি লোকজন ও ঠিকাদার সুবিধাভোগীদের কোনো কথাই শোনেননি। তারা বালুর উপর এক ফুট ভিত দিয়ে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছে। জোয়ারের পানিতে বালু সরে গিয়ে ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে।

তাদের অভিযোগ, অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ওই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এই কারণে মাত্র কয়েক মাসেই ঘরগুলো ভেঙে পড়েছে। অন্যান্য ঘরেও ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যার ফলে আতঙ্কে আছেন তারা।

এসব ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘ঘরগুলো মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণে অনিয়মের দায় নিয়োগকৃত ঠিকাদার, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির সবাইকে নিতে হবে।’ সংস্কার কাজে অনিয়ম হচ্ছে কিনা খোঁজ-খবর রাখবেন বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877