স্বদেশ ডেস্ক:
দেশে সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল। খাদ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৮ এপ্রিলের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে দেখা যায় ওই দিন সরকারি গুদামে মজুদ করা মোট খাদ্যশস্যের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১০ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুদ মাত্র ৩ লাখ টন আর গমের ২ লাখ ১২ হাজার টন। কিন্তু দেশে নিরাপদ খাদ্য মজুদের ন্যূনতম পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল চাল-গম মিলিয়ে ১১ লাখ টন। বিষয়টি সরকারও গুরুত্ব দেয়। এর পর খাদ্য মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা মজুদ সুসংহত করার লক্ষ্যে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১১ লাখ টনেরও বেশি চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ অবস্থায় ৬৩ দিনের ব্যবধানে খাদ্য মজুদে বড় উল্লম্ফন দেখা দেয়। সরকারের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে গত ১ জুলাই দেশে খাদ্য মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন।
খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, খাদ্য মজুদে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। বর্তমানে দেশে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে। আমাদের ফলনও ভালো। এ ছাড়া টেন্ডারের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কৃষক যেন অসুবিধায় না পড়ে এ জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ রয়েছে সরকারের।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়ানোয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য চলমান
প্রকল্পগুলোকে তদারকি করা হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই তিনটি নতুন সাইলো চালুর কথা রয়েছে। বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে কার্যক্রম কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। দেশে যে খাদ্য গোডাউন (এলএসডি, সিএসডি) আছে, সেগুলো ফ্ল্যাট গোডাউন। এতে বস্তাবন্দি করে শস্য রাখা হয়। কিন্তু আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগারে তা করা হবে না। এতে মানসম্পন্নভাবে দীর্ঘদিন খাদ্য সংরক্ষণ করা যাবে। প্রাথমিকভাবে একটি সাইলোতে আড়াই থেকে তিন বছর পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মান সম্পূর্ণ বজায় রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলে একই ধরনের সাইলো নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।
চলতি বছরের বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের আওতায় ২৮ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ২ লাখ ২৬ হাজার টন বোরো ধান, ৪ লাখ ৯৫ হাজার টন সিদ্ধ বোরো চাল এবং ৪০ হাজার টন বোরো আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ সময়ে ১০ লাখ টন গম সংগৃহীত হয়েছে। গত মৌসুমে উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান খুব একটা কার্যকর হয়নি। ফলে আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। এদিকে মজুদ বাড়াতে চাল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের আমদানিও বাড়াচ্ছে সরকার।
জানা গেছে মিল মালিক, পাইকার, কৃষক, ভোক্তাসহ বেসরকারি খাত মিলিয়ে দেশে এখনো প্রায় দেড় কোটি টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের হিসাব ধরে প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন কোটি টন খাদ্যের চাহিদা রয়েছে। গত বোরো মৌসুমে অন্তত ১ কোটি ৬০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। একইভাবে গম উৎপাদিত হয়েছে ১৫ লাখ টন এবং ভুট্টা ৪৫ লাখ টন। সিংহভাগই এখন কৃষকের গোলায় ও ঘরে গচ্ছিত। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত কিংবা শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিশ্লেষকরা। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাদ্য মজুদ কমে গেলে সরকারের নেওয়া টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো বিঘিœত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতি মাসে খাদ্যের চাহিদার গড় ১৯ থেকে ২১ লাখ টন। যার প্রায় ৮০ ভাগই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে মিটানো হয়। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে প্রতি বছর ৭০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। গত বছর প্রায় ১৩ লাখ টন গম অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত হয়ে। বাকিটা আমদানি করতে হয়। এবারও ১৫ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এদিকে সাড়ে ৬ লাখ টন চাল আমদানির কথা। এর বেশিরভাগই ইতোমধ্যে দেশে চলে এসেছে।
এদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের খাদ্য মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেননা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্য সংগ্রহের পর তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও মজুদ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হয়। যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারকে অন্তত দুই মাসের চাহিদার সমপরিমাণ খাদ্য মজুদ রাখতে হয়, যা জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা এফএওর নীতি অনুসৃত। বর্তমানে খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে খাদ্য মজুদ সক্ষমতা প্রায় ২১ লাখ টন। তবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও তিনটি সাইলো চালু হচ্ছে। আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের সাইলোর মাধ্যমে মজুদ সক্ষমতা বাড়বে দুই লাখ টন।