স্বদেশ ডেস্ক:
বিগত এক দশকে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমানতালে অগ্রসর হতে পারেনি অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ। এমনকি গত ৫ বছরে সমমানের দেশ, আঞ্চলিক ব্লক ও উন্নত দেশের সঙ্গে রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে আছে। আলোচ্য সময়ে দেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে ভারতের ১৯ দশমিক ৭, নেপালের ২১ দশমিক ৫, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৯, শ্রীলংকার ১২ দশমিক ৭, উদীয়মান ও এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশের ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং উন্নত বিশ্বে ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এজন্য রাজস্ব ব্যবস্থায় বিদ্যমান দুর্বলতা বিবেচনায় নিয়ে দেশের রাজস্ব আহরণের কৌশল নতুনভাবে পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে দেশের মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সেখানে আশার দিক উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হলে এবং এনবিআর সংস্কার কর্মসূচি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণ জোরদার হবে।
আগামী ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ১৩ লাখ ২৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে চায় সরকার। এ অর্থের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ লাখ ২৭ হাজার ২১০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের করা মধ্যমেয়াদি রাজস্ব পূর্বাভাসে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, জিডিপির অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায় তিন বছরের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে।
অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদে রাজস্ব পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, ‘রাজস্ব খাতে চলমান ও প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচিসমূহ অভ্যন্তরীণ আহরণ বাড়াতে ও মধ্যমেয়াদে রাজস্ব লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রকৃত আহরণ হতে ২১ শতাংশ হারে (গড়ে) রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে।’
এদিকে মধ্যমেয়াদে রাজস্ব পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে আয় করতে হবে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সার্বিক রাজস্ব আদয়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের টার্গেট তিন লাখ ৭১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করতে হবে চার লাখ ৯৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা এবং এনবিআরকে আদায় করতে হবে চার লাখ ২৫ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। সে বছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে।
একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময় এসে দেখা যায় কোনোভাবেই এ টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে টার্গেট থেকে ১৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থ বিভাগের করা এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান হচ্ছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা; যা কিনা সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা কম এবং মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কম।
এর আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর অংশে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল; কিন্তু সেই বছরও এনবিআর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা; যা কিনা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা কম।
এর আগে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআরের আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে যথাক্রমে এক লাখ ৪৬ হাজার ২৪২ কোটি এবং এক লাখ ৭১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজস্ব প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নানা ধরনের সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে এবং বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সব প্রশিক্ষণ একাডেমি আধুনিকায়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেবার মান বৃদ্ধি এবং করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করনীতি সহজ, দক্ষ করব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়ীসহ সব স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে এনবিআর।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আমাদের সময়কে বলেন, করদাতাদের উৎসাহ দিতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করনীতি সহজ করা হয়েছে। হয়রানি যেন না হয় সে বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কর কোনো দায় নয়। রাষ্ট্রের সেবার জন্য কর দেওয়া উচিত