সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন

দুবাই পাচারে ভারতীয় আইডি ব্যবহার করত বস রাফি চক্র

দুবাই পাচারে ভারতীয় আইডি ব্যবহার করত বস রাফি চক্র

স্বদেশ ডেস্ক:

শুধু নিম্নবিত্তই নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মেয়েদেরও বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে ভারতে পাচার করা হতো। সেখানে গিয়ে মডেলিং বা চাকরি প্রদান এবং এরও পর মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়ার ফাঁদ পাতত পাচারকারী চক্র। পাচারকৃত তরুণীদের কাউকে কাউকে ভারতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়ে দিত বস রাফির চক্রটি। মূলত ভারতীয় পুলিশের হাত থেকে রক্ষায় এমন বুদ্ধি আঁটত চক্রটি।

সম্প্রতি ভারতের কেরালায় বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের বিষয়টি সামনে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি এবং তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদা, আবদুর রহমান শেখ ওরফে আরমান ও ইসমাইল সরদার- এ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জবানিতেই বেরিয়ে আসছে নারী পাচার সম্পর্কে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদেরও পাচার করার তথ্য পাওয়া গেছে। মূলত ভারতের মুম্বাইয়ের মতো শহরে মডেলিং ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষিত তরুণীদের পাচার করেছে। যদিও মোট তরুণী পাচারের তুলনায় এর সংখ্যা খুব বেশি নয়।

র‌্যাব জানায়, বেশ কয়েকটি ধাপে নারী পাচারের কাজ করত চক্রটি। ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উভয় পথেই সীমান্ত অতিক্রম করানো হতো। তারা কয়েকটি ধাপে পাচার করত। প্রথমত ভিকটিমদের তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তবর্তী জেলা (যেমন- যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ) নিয়ে আসত। এর পর ভিকটিমকে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সেফ হাউসে নিয়ে রাখা হতো। সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করানো হতো। পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্টরা তাদের সীমান্ত নিকটবর্তী সেফ হাউসে রাখত। সুবিধাজনক সময়ে কলকাতার সেফ হাউসে পাঠানো হতো। কলকাতা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বেঙ্গালুরু পাঠানো হতো তাদের। বেঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর গ্রেপ্তারকৃত বস রাফি তাদের বিভিন্ন সেফ হাউসে রাখত।

র‌্যাবের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় বস রাফি সিন্ডিকেটের সেফ হোম রয়েছে। এসব সেফ হোম থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ভারতে পাচার করা হতো। ইতোমধ্যে এসব দালালের অনেককে চিহ্নিত করেছে র‌্যাব। তাদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।

র‌্যাবের তদন্তসূত্র জানায়, মূলত ভারত থেকে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো পাচারের শিকার এসব মেয়েকে। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পর তারা প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পারত; বুঝতে পারত ফাঁদে পড়ে গেছে। ততক্ষণে ফিরে আসার বা অন্য কিছু করার থাকত না। নির্মম শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি জোর করে হলেও এসব তরুণীকে মাদক সেবন করিয়ে আদিম পেশা বেছে নিতে বাধ্য করা হতো। এসব তরুণীর মধ্যেই কেউ কেউ, যারা সেই স্রোতে গা ভাসাতে পারত, তারা পরবর্তী সময়ে পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে অন্য মেয়েদের পাচারে সহায়তা করত। সম্প্রতি এমন একাধিক ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ-র‌্যাব।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, চক্রটিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ভারতের বেঙ্গালুরুতে একটি পাচারকারী চক্রের হাতে বাংলাদেশি এক তরুণীর যৌন নির্যাতনের ভিডিও ফাঁসের পর দুই দেশে তোলপাড় শুরু হয়। এক পর্যায়ে নিপীড়ক তিন যুবক ও এক কিশোরীকে গ্রেপ্তার এবং নির্যাতিত তরুণীকে উদ্ধার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশি। এর মধ্যে ‘টিকটক হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত যুবক ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরেলায় নির্যাতিতা তরুণীর ঢাকায় অবস্থান করা বাবা।

পাঁচ বছর ধরে নারী পাচারে জড়িত বস রাফি। এ সময়ে পাঁচ শতাধিক নারীকে বিভিন্নভাবে ভারতে পাচার করেছে তার সিন্ডিকেট। দুই বছর আগে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণীকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে বস রাফি। নারী পাচারে টিকটক হৃদয় ছাড়াও তার এজেন্ট রয়েছে। কেরালার নির্যাতিত ওই তরুণীকে সেখানে পাচার করেছে হৃদয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877