সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

দাম বাড়ায় অস্থির সয়াবিন তেলের বাজার

দাম বাড়ায় অস্থির সয়াবিন তেলের বাজার

স্বদেশ ডেস্ক:

বাজারে বেড়েই চলেছে সব ধরনের সয়াবিন তেলের দাম। আগের দফায় বাড়ানোর এক মাস পার হতে না হতেই আরেক দফা দাম বাড়াল ব্যবসায়ীরা। এবার এক লাফে প্রতি লিটারে নয় টাকা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে তেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

আর এতেই নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে রাজধানীর সয়াবিন তেলের বাজারে। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এখন থেকে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকায় বিক্রি হবে, যা এতদিন বিক্রি হয়েছে ১৪৪ টাকায়।

এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল তেলের দাম পড়বে ৭২৮ টাকা। অপরদিকে খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১২৯ টাকা ও পাম সুপার তেল ১১২ টাকা দরে কিনতে হবে ক্রেতাদের। এর আগে গত মাসে ৫ টাকা দাম বাড়ানোর পর আবার ৩ টাকা কমানোর কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। অথচ আগের বাড়তি দামের সঙ্গেই যোগ করা হয়েছে ৯ টাকা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি আরও জানায়, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে অতিমাত্রায় মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত ১৯ মে গড়ে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং বিষয়টি বিবেচনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর আগে রমজান মাস এবং করোনা মহামারীর কারণে ভোক্তাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত প্রতি লিটারে ৩ টাকা ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবিত মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে সংগঠনটির ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।

দাম বাড়ানোর খবরে গতকাল দুপুর থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছে সয়াবিন তেলের বাজার। যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, মালিবাগ ও কারওয়ানবাজারসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পর্যন্ত আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। তবে দাম বাড়ার খবরে তেলের ক্রেতা বেড়েছে। অনেকে পুরনো দামে পেয়ে অতিরিক্ত তেল সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে অনেক খুচরা দোকানে চাহিদা অনুযায়ী পছন্দের কোম্পানির তেল মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মজুদ শেষ বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশি দাম পাওয়ার আশায় অনেক ব্যবসায়ী তেলের বোতল মজুদ করছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের বিউটি স্টোরের ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন জানান, তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে সে খবর এ বাজারেরও ব্যবসায়ীদের আলোচনায় রয়েছে। বাজারে নতুন দামের তেল এখনো ওঠেনি। দাম বাড়েনি, কিন্তু ক্রেতা বেড়েছে। এ বাজারে আগের মতোই বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ থেকে ১৪০ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে আজ পাঁচ লিটারের বোতল পাঁচ টাকা বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। তবে রবিবারের মধ্যে দাম আরও বেড়ে যাবে। নতুন দামের তেল এলে তখন বেশি দামে কিনতে হবে ক্রেতাদের।

মালিবাগ বাজারের মেসার্স গাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মো. রুবেল হোসেনও বলেন, বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্রেতা বেড়েছে। দাম বাড়ার খবরে সকাল থেকেই সয়াবিন তেলের ক্রেতাদের আগমনই ছিল বেশি। পুরনো দামে তেল পাওয়ায় অনেকেই বেশি করে তেল সংগ্রহ করছেন। এতে বিক্রিও বেড়ে গেছে। হঠাৎ তেলের এমন চাহিদা দেখে খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে বোতল তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. রায়হানও বলেন, দোকান খোলার সময়ও জানতাম না যে, গতকাল রাতে (বৃহস্পতিবার) তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। দোকানে তেলের এত ক্রেতা দেখে খোঁজ নিয়ে জানলাম- দাম বাড়ানো হয়েছে, তাই ক্রেতারা পুরনো দামে বেশি তেল সংগ্রহ করছেন।

গতকাল বিকালে কিচেন মার্কেট থেকে পাঁচ লিটারের চার বোতল কিনে বাড়ি ফিরছিলেন মো. জহিরুল আলম। তিনি বলেন, সকালে গণমাধ্যমে জানতে পারলাম দাম বেড়েছে। বাজারে এসে দেখি এখনো আগের দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে। পরে কিনলে বেশি দামে কিনতে হবে, তাই এক বোতলের জায়গায় চার বোতল কিনে বাড়ি ফিরছি।

শাহ মিরান স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, তেলের দাম বাড়ার খবরে অনেকে ফোন দিয়েও পুরনো তেল রেখে দিতে বলছেন। পরে এসে নিয়ে যাবেন তারা। পুরনো খদ্দের হওয়ায় মানাও করতে পারি না। তাই বাড়তি তেল কিনে তাদের জন্য আলাদা রেখে দিতে হচ্ছে। তবে যাদের কাছ থেকে তেল সংগ্রহ করি তাদের কাছে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না।

একই কথা জানালেন ঢাকা জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মুজাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় মজুদদারের কাছে পুরনো দামেই পাঁচ লিটারের প্যাকেট কিনেছি। আজও আগের দামই রয়েছে। কিন্তু তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, অনেক ক্রেতাই বোতলের গায়ের সর্বোচ্চ মূল্য যাচাই করেন না। তাই পরবর্তীতে বেশি দাম পাওয়ার লোভে অনেকে কিছু তেল মজুদ করে রাখছেন। অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেল মজুদ করছেন। কেউ আবার বিক্রি না করে অন্যের জন্য বুক করে রাখছেন। তাই অনেক ক্রেতা পছন্দের ব্র্যান্ডের তেল না পেয়ে অন্য ব্র্যান্ডের তেল কিনে বাড়ি ফিরছেন।

দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ২০২০ সালের জুন মাসের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেহেতু, ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ৯৫ ভাগেরও বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয় সেহেতু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিগত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে স্থানীয় দেশীয় বাজারে মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ। আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারে দামের ব্যবধান বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র (এলসি) খুলছেন না। তাই দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন। নইলে ব্যবসায়ীর কেউ এলসি খুলবেন না। এতে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট আরও প্রকট হবে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, যেহেতু দেশের চাহিদার সিংহভাগই বিদেশ থেকে আমদানি হয়। সেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়বে। কারণ কোন ব্যবসায়ী লোকসান দিয়ে তো আর ব্যবসা করবে না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারের উচিত কেবল ব্যবসায়ীদের দিক না দেখে সবদিক বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া। মন্ত্রণালয় দেশীয় উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজার, আমদানি এবং স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে। সুতরাং সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে দিলে দুর্ভোগ কমবে। সরকার চাইলে আমদানি শুল্ক কমিয়ে কিংবা ভর্তুকি দিয়ে দেশীয় বাজারে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877