মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

বাবুলের হয়ে মুসাকে টাকা পাঠান ইরাদ

বাবুলের হয়ে মুসাকে টাকা পাঠান ইরাদ

স্বদেশ ডেস্ক:

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে মোকলেসুর রহমান ইরাদ নামে একজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বাবুল আক্তারের পূর্ব পরিচিত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মো. শফী উদ্দিনের আদালতে জবানবন্দি দেন মোকলেসুর রহমান ইরাদ।

এদিকে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ককক্সবাজারে কর্মরত ফিল্ড অফিসার (প্রটেকশন) গায়ত্রী ওমর সিং সম্পর্কে জানাতে ওই সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সংস্থাটির বাংলাদেশ কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বরাবর চিঠিটি দেন।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিতুকে খুনের ঘটনায় ‘কিলিং মিশনের প্রধান’ হিসেবে চিহ্নিত কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা সিকদারের দেওয়া বিকাশ নম্বরে হত্যাকা-ের পাঁচ দিন পর ইরাদ তিন লাখ টাকা পাঠানোর কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন। জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, সাক্ষী হিসেবে মোকলেসুর রহমান ইরাদ জবানবন্দি দিয়েছেন। ইরাদ সাইফুল হকের স্টাফ। সাইফুল হক বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক অংশীদার। ইরাদ বিকাশে টাকা পাঠানোর কথা জানিয়েছেন।

ইরাদের তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা

জানিয়েছেন, সাইফুল হকের নির্দেশে হত্যাকা-ের পাঁচ দিন পর ইরাদ মুসার দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরে মোট তিন লাখ টাকা পাঠান। পাবনায় সাইফুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইরাদও পাবনার বাসিন্দা।

এর আগে গত ১১ মে সাইফুল হক ও গাজী আল মামুন নামে দুই ব্যক্তি মিতু হত্যায় দায়ের হওয়া আগের মামলায় একই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। বাবুল আক্তারের পূর্ব পরিচিত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হক জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, মিতু হত্যার তিন দিন পর তিনি বাবুল আক্তারের নির্দেশে গাজী আল মামুনের মাধ্যমে মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসার কাছে তিন লাখ টাকা পাঠান। গাজী আল মামুন সেই মুসার আত্মীয়। মামুনও জবানবন্দি দিয়ে টাকা লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেন।

পিবিআই জানিয়েছিল, বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠজনের জবানবন্দিতে হত্যাকা-ের পর টাকা লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পরই পিবিআই নিশ্চিত হয়, মিতুকে হত্যার জন্যই মূলত এই তিন লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এটি ছিল একটি কন্ট্রাক্ট কিলিং। মূলত বাবুল আক্তারই টাকা পাঠানোর জন্য সাইফুলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান সেদিন বলেছিলেন, সাইফুল হকের মাধ্যমে বাবুল আক্তারই তিন লাখ টাকা পাঠান। সাইফুল মুসার আত্মীয় গাজী আল মামুনের মাধ্যমে এ বিষয়ে মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিকাশের মাধ্যমে এ টাকা লেনদেন হয়েছে। বিকাশের লেনদেনের সিøপ আমরা উদ্ধার করেছি। আমরা তদন্তে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, হত্যাকা-ের পর বাবুল আক্তার তার পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকাগুলো মুসার কাছে পাঠান।

গত ১২ মে সকালে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারও এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাইফুল ও মামুনের জবানবন্দির পরই মূলত বাবুল আক্তারের হত্যাকা-ে জড়িত থাকার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০১৭ সালে মিতুর বাবার মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, মিতু খুন হয়েছেন বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায়। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এর পর মিত্যু হত্যা জট খুলতে থাকে। গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পিবিআইর চিঠি ইউএনএইচসিআরকে : মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তার সম্পর্কে জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সংস্থাটির বাংলাদেশ কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বরাবর চিঠিটি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ২০১৩ সালে বাবুল আক্তার যখন কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তখন ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল, যা মামলার এজাহারে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন উল্লেখ করেছেন। তার সম্পর্কে জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বাবুল আক্তারকে ওই নারীর দেওয়া দুটি বইয়ের ফরেনসিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য শিগগিরই আদালতে আবেদন করা হবে।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশারফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ওই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তার মেয়েকে খুন করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877