সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ আসছে

ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ আসছে

স্বদেশ ডেস্ক:

ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ আসছে। এটা সুন্দরবন উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়ার মডেল পূর্বাভাসগুলো বলছে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উত্তর প্রান্তের ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সৃষ্টি হয়ে দুই দিন বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করে আগামী ২৬ মে উঠে আসতে পারে উপকূলে। এটা হবে একটি মাঝারি মানের ঘূর্ণিঝড়। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৩০ থেকে দেড় শ’ কিলোমিটার। আগামী ২৩ মে আন্দামান সাগরের কাছে লঘুচাপ সৃষ্টির মাধ্যমে সূচনা হবে ইয়াশের। এক দিনের মধ্যেই তা সুস্পষ্ট লঘুচাপ পর্যায় অতিক্রম করে ২৪ মে নিম্নচাপে পরিণত হবে। নিম্নচাপ অবস্থায় এটি বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রম করার পর ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশে পরিণত হবে বলে আবহাওয়ার মডেল মার্কিন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করলেও তারা আগামী ২৩ মে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে। এরপর কি হবে পূর্বাভাসে তার কিছু নেই।

মে মাসের কিছু অংশ বাংলা বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভক্ত। এ সময়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মৃদু থেকে মাঝারি মাপের তাপপ্রবাহ চলে সব সময়। বৃষ্টিপাতও তুলনামূলক কম থাকে, দেখা দেয় অনাবৃষ্টি। ফলে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তো বটেই বঙ্গোপসাগরের নীল পানি ও উত্তপ্ত হতে থাকে। কিন্তু চলতি বছর অনাবৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। ফলে চট্টগ্রাম ও মিয়ানমার অংশে বঙ্গোপসাগরের উপকূল এখন খুবই উত্তপ্ত। পানি অনেক বেশি উত্তপ্ত ওয়ার কারণেই আন্দামান সাগরের দিকে লঘুচাপটি সৃষ্টি হয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে আসা মাত্রই এখানকার গরম পানির ছোঁয়ায় দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে নি¤œচাপ হবে এবং দুই দিনেরও কম সময়ের মধ্যে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলে কানাডার সাসকোয়ার ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন নয়া দিগন্তকে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের যে স্থানটিতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে সেখান থেকে বাংলাদেশের উপকূলের দূরত্ব ৮০০ থেকে এক হাজার কিলোমিটার। এই দূরত্ব অতিক্রম করতে ঝড়টির মাত্র দুই দিন লাগবে। সাগরে পানির উষ্ণতা বেশি থাকায় ঝড়টি বঙ্গোপসাগরে বেশি সময় ধরে অবস্থান করতে পারবে না। যত দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে তত দ্রুতই তা সাগর অতিক্রম করে উপকূলে উঠে যাবে।

মোস্তফা কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াশের গতিবেগ মাঝারি মানের (সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার ঘণ্টায়) থাকলেও উপকূলে উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ সে দিন বাংলাদেশে পূর্ণিমা থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ে এমনিতেই সাগর উত্তাল থাকবে। আবার পূর্ণিমার ভরাকটালের টানে জলোচ্ছ্বাস আরো কিছুটা উঁচুতে উঠবে। উপকূলের অধিবাসীদের এই বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে সাবধান করে দিতে হবে যেন ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়।

লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার দুই দিনের মধ্যেই নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পেছনে কারণ কি জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল জানান, খরার কারণে চট্টগ্রাম ও মিয়ানমার উপকূলে অনেক দিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সাগরের এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বর্তমানে ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। উত্তপ্ত পানিতে একটু আন্দোলন হলেই তাতে ঘূর্ণনের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে লঘুচাপের দুই দিন পরই তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। তিনি জানান, আমেরিকান, ইউরোপিয়ান ও কানাডার স্যাটেলাইটের চিত্র এবং আবহাওয়ার মডেল মডেল পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ বাংলাদেশের সুন্দরবন ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে নির্দেশ করা হয়েছে। কোনো কোনো মডেলে ঝড়টি উড়িষ্যা উপকূলে উঠে যাওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এটা আরো স্পষ্ট করে বলা যাবে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির হওয়ার পর। তিনি জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের যে মডেল তৈরি করা হয়েছে, তাতে দেখানো হয়েছে ঝড় সৃষ্টি হলে তা ২০ কিলোমিটার গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। তাতে আগামী ২৬ মে ঝড়টি উপকূলে উঠে যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877