বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

রোকসানাদের ‘এক পায়ে ডর, অন্য পায়ে আনন্দ’

রোকসানাদের ‘এক পায়ে ডর, অন্য পায়ে আনন্দ’

স্বদেশ ডেস্ক:

আর দুদিন পরই ঈদ। গত বছরের মতো এবছরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি মাথায় রেখে ঈদ পালন করবে দেশে মানুষ। প্রতিবছর যেভাবে বহু ঝড়-ঝাপ্টা মাথায় নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে মানুষ, এবারও ফিরছে। তবে, এবার তাদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছে না স্বপ্ন। কারণ, কারও বেতন নেই, কেউ করতে পারনেনি চাহিদা মতো আয়। কেউ বাবা-মার জন্য নিতে পারছেন না ঈদের পোশাক, কারও ছোট ছোট সন্তান ঈদে ভালো খাবার খাবে বলে অপেক্ষায় আছে।

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার তার নাগরিকদের নিজ নিজ স্থানে থাকতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছেন না সাধারণ মানুষ। বাড়ি তাদের ফিরতে হবেই। তাইতো কেউ দ্বিগুন ভাড়া খরচ করে বিভ্ন্নি যানে, কেউবা আবার পায়ে হেঁটে বাড়ির পথ ধরেছেন।

পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরাদের দলের একজন রোকসানা আক্তার। ৬ মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে বাড়ির পথ ধরেছেন তিনি। সঙ্গে আছে স্বামী ও অন্য দুই সন্তান। সকালে ঝোড়ো হাওয়া মাথায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন তারা। কথা বলে জানা যায়, রোকসানার বাসা রাজধানীর শেখের টেক এলাকায়। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। পায়ে হেঁটে যতদূর যাওয়া যায়, যাবেন তিনি। তাদের এক পায়ে ভয়, অন্য পায়ে আনন্দ।

আমাদের সময়কে রোকসানা বলেন, ‘আমাগো এক পায়ে ডর অন্য পায়ে আনন্দ। পাটুরিয়া পর্যন্ত পৌঁছাইতে পারলে আর চিন্তা নাই। সামনে যা পাই, নিয়া চইলা যামু।’

পথের অনিশ্চয়তার ডরভয় উপেক্ষা করেই প্রিয়জনের সান্নিধ্যের আশায় হাজারো দুর্ভোগের মধ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন বহু মানুষ। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি ঈদের পরিবারের লোকজন তাদের আশায় বসে থাকেন। বিশেষ করে বাবা-মা। তাই শত কষ্ট উপক্ষা করে হলেও বাড়ি ফিরতে যান তারা।

এদিকে সাভারের চেকপোস্টগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে গ্রামের পথ ধরা হাজারো মানুষের স্রোতে। ঢাকার সঙ্গে বর্হিমুখ ও প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসিয়েও জনস্রোত ঠেকাতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গাবতলী হয়ে আমিনবাজার সেতু পর্যন্ত কোনো রকম এলেই তারপর মিলছে লোকাল বাস বা ছোট ছোট যান। সেগুলোতে চেপে বাকি পথ পাড়ি দিচ্ছেন। আরিচা পর্যন্ত যেতে পারলেই বাকি ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন তারা।

এদিকে, আজ মঙ্গলবার সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স জব্দ করেছে পুলিশ। বাহনটিতে গাদাগাদি করে ১৪ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আরিচায়। আটক করা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটির চালক মো. সিরাজুল ইসলামকে। সাভার ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আব্দুস সালাম বলেন, গ্রামের পথে ছুটে চলা বেপরোয়া মানুষ কোনো বাধাই তোয়াক্কা করছেন না। মানছেন না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি। মানুষকে সচেতন করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ও কার্যকর কোনো ফল মিলছে না। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সে করে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছিল। আমরা বাহনটি জব্দ করেছি। চালককে আটক করেছি।

সাভার এলাকার বিভিন্ন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ চেকপোস্টের অংশটুকু পায়ে হেঁটে অতিক্রম করে কখনো বা মূল সড়ক এড়িয়ে সরু গলি, কাদামাখা পথ মাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় গ্রামের পথ ধরেছেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে। কেউ রিক্সা, কেউ কাভার্ডভ্যান, কেউবা ট্রাকে করেই ফিরছেন গন্তব্যে।

অন্যদিকে সামর্থ্যবান মানুষদের ব্যক্তিগত যানবাহনে গ্রামের বাড়ি ফেরার পাড়ায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা পুলিশ চেকপোস্ট এড়াতে অসংখ্য মানুষ মানিকগঞ্জ হয়ে আরিচা ঘাট ও পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাতে সিংগাইর দিয়ে যাতায়াত করছেন। সেখানকার প্রবেশমুখে বিজিবি বসিয়েও ফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877