স্বদেশ ডেস্ক:
তিন মাসের মাথায় আবারও আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বিরাট অংশজুড়ে। প্রায় দুই একর বনজুড়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে বাগেরহাট সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় এ অগ্নিকা- ঘটে। খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ ও শরণখেলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, বন বিভাগ ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে রাত নয়টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকার চার শতক ভূমি (যা সুন্দরবনের অন্তত ৩ শতাংশ) পুড়ে যায়। এই নিয়ে গত ২০ বছরে ২৫ বার অগ্নিকা- ঘটেছে সুন্দরবনে।
বন বিভাগ জানায়, অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে মাটিতে বিভিন্ন প্রজাতির জমে থাকা গাছের পাতা গরম হয়ে প্রাকৃতিকভাবে এ অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হতে পারে। অপরদিকে, স্থানীয়দের মতে- বনের মধুসহ নানা প্রকার সম্পদ চোরাই পথে আহরণকারীদের অসাবধানতার কারণে এ অগ্নিকা- ঘটতে পারে। জেলে, বাওয়ালি কিংবা মৌয়ালদের ফেলে দেওয়া বিড়ি বা সিগারেটের আগুন থেকে এই অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন।
গতকাল সোমবার সকাল দশটার দিকে স্থানীয়রা শরণখোলা চাঁদপাই রেঞ্জের মধ্যবর্তী এলাকায় ধোয়ার কু-লী দেখে দাসের ভাড়ানি ক্যাম্পের বনরক্ষীদের খবর দেন।
শরণখোলা রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান সোমবার রাত ৯টায় আমাদের সময়কে জানান, বাতাসের তীব্রতার কারণে আগুন বনের প্রায় দেড়-থেকে দুই একর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, লতাপাতা ছাড়া বড় গাছগুলো যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য চারদিক থেকে ইতিমধ্যে নালা কাটা হয়েছে। ভাটা শুরু হওয়ায় পানি কমে গেছে। তাই পানির অভাবে আগুন নিভানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের নিয়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দারাও আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন, শরণখোলা রেঞ্জের (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুর রহমান, শরণখোলা থানার ওসি মো. সাইদুর রহমানসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণেই আগুন লেগেছে। সুন্দরবনের মধ্যে শুকনো পাতার স্তূপ রয়েছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় প্রাকৃতিকভাবে এই আগুন ধরেছে বলে মনে হচ্ছে।
সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ‘সুন্দরবনে বারবার আগুন লাগার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। আগুন লাগার ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে জানা যায় না। যখনই আগুন লাগে তখনই দায়সারা গোছের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগুন লাগার মূল রহস্য উদঘাটন হওয়া জরুরি।’ ভবিষ্যতে যাতে আগুন না লাগে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আছাদুজ্জামান মিলন আরও বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির কারণ আমাদের জানার অধিকার রয়েছে। সুন্দরবনের এই অগ্নিকা- মানবসৃষ্ট কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বাগেরহাটের উপসহকারী পরিচালক মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ স্টেশনের ২০জন সদস্য কাজ করছে। ওই এলাকায় ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। পানির উৎস পাওয়া গেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় অল্পকিছু জায়গায় আগুন ধরেছে। যে এলাকায় আগুন ধরেছে ওই এলাকায় সুন্দরী গাছের পরিমাণ কম। ফায়ার সার্ভিস ও বনকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আগুন লাগার কারণ জানানো হবে।
স্থানীয় সিপিজির টিম লিডার লুৎফর রহমান বলেন, সুন্দরবনে আগুন লাগলে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আমরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিই। এর আগেও আমরা ১৫-২০জন সিপিজি সদস্য সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছি। আজও আমরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিয়েছি। আশা করি দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব