শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বরিশালে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডায়রিয়া

বরিশালে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডায়রিয়া

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনাকালে হঠাৎই আরেক ভাইরাসজনিত রোগ ডায়রিয়ার হানা দেশে। দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ বিভাগে নতুন করে ডায়রিয়ায় ১ হাজার ৫১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, ঘণ্টায় যা ৬৩ জন। মৃত্যুও হয়েছে দুজনের। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন দ্বীপ ও উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দারা। গত সাত দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ২০ জন, যা গড়ে দৈনিক ১ হাজার ১৪৫। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১ হাজার ৫১২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সাড়ে চার মাসের বেশি সময়ে (জানুয়ারি থেকে ২১ এপ্রিল) আক্রান্ত হন মোট ৩২ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোলায় ৮ হাজার ৯০ জন। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে ৭ হাজার ৩৪১, বরগুনায়

৪ হাজার ৮৪৯, বরিশালে ৪ হাজার ৩৬৯, পিরোজপুরে ৪ হাজার ২ ও সর্বনিম্ন ঝালকাঠিতে ৩ হাজার ৫৩২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আটজনের। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় চারজন এবং বরগুনা ও পটুয়াখালীতে দুজন করে।

ভোলায় রোগী সামলাতে হিমশিম : ভোলায় দুই মাস ধরে ক্রমেই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০টি শয্যা থাকলেও প্রতিদিনই আসছেন দেড় শতাধিক রোগী। ঠাঁই না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশিরভাগ। এদের একটি বড় অংশই শিশু। আর একসঙ্গে এতজনকে চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

জানা যায়, এত রোগীর সেবায় নিয়োজিত মাত্র দুজন নার্স। কাজের চাপে তারাও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন বারবার। তাই চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি ওয়ার্ড বয় ও ঝাড়–দারদেরও দিনভর পরিশ্রম করতে দেখা যায়। ভোলার সিভিল সার্জন সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে স্যালাইনস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তার ধারণা, গরমের কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে।

পটুয়াখালীতে করোনার চেয়ে ডায়রিয়া রোগীদেরই বেশি গুরুত্ব : জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৪১ জন। এর মধ্যে সদরেই ২ হাজার ২২৩ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝে ডায়রিয়া সংক্রমণ মারাত্মক আকারে বেড়ে গেছে। তাই ডায়রিয়া রোগীদেরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এখন।

নদী-পুকুরের পানির কারণে বরগুনায় বাড়ছে আক্রান্ত : ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র- আইসিডিডিআরবির একটি গবেষক দল গত মার্চের শুরুর দিকে বরগুনায় যায়। সদর উপজেলার বুড়িরচর, ঢলুয়া, গৌরীচন্না, ফুলঝুড়ি ইউনিয়নসহ পৌরশহরের বেশ কিছু এলাকায় গবেষণা চালানো হয়। এর পর গবেষক দল জানায়, তারা হাসপাতালে কয়েকজন রোগীর পেটে কলেরা জীবাণুর উপস্থিতি পান। ওই রোগীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ওই পরিবারসহ এলাকার বাসিন্দারা গভীর নলকূপের পানি পান করলেও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন সরাসরি পুকুরের পানি। বিশেষ করে এ অঞ্চলে দুপুরের রান্না করা ভাত রাতে খাওয়ার পর পুকুরের পানি দিয়ে রাখা হয়। ওই ভাত (পান্তা ভাত) সকালে তারা খেয়ে থাকেন। পানি বিশুদ্ধ না করে সরাসরি ব্যবহার করার ফলে জীবাণু পাকস্থলীতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ‘আইসিডিডিআরবির গবেষণালব্ধ পরামর্শ আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গেও আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল আমাদের সময়কে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে রোগীদের চাপ।’

এদিকে বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ১২৯ জনসহ করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৬৩২ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরিশালে ৬ হাজার ২১০, পটুয়াখালীতে ২ হাজার ২৯, ভোলায় ১ হাজার ৫৭৪, পিরোজপুরে ১ হাজার ৪৯৮, বরগুনায় ১ হাজার ১৭৫ ও সর্বনিম্ন ঝালকাঠিতে ১ হাজার ১৪০ জন। এ ছাড়া করোনায় মৃত্যু হয়েছে মোট ২৪৪ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ১৪৫ জন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877