মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১৪ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ

‍স্বদেশ ডেস্ক:

রোহিঙ্গাদের ৫টি ক্যাম্পে গত সোমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ৯ হাজার ৩০০ বসতঘরের ওপর একে একে ত্রিপল টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অগ্নিকা-ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব-অসহায় অবস্থায় দিনানিপাত করা প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৫ হাজার সদস্যের বসবাসের জন্য সাময়িক এ পদক্ষেপ গ্রহণে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে ক্যাম্পের দৃশ্য। সরকারের পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এ ব্যবস্থার পাশাপাশি বসতহারা রোহিঙ্গাদের শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় বিধ্বস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ।

এদিকে গতকাল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে জানান, অগ্নিকা-ে কারও দুরভিসন্ধি বা অবহেলা কিংবা দোষ থাকলে তাকে বা তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আগুন লাগার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আশ্বাস দেন, ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার।

বালুখালীর ৯ নাম্বার ক্যাম্পের ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা আনোয়ারা বেগম, ফরিদা আক্তার, ও মরিয়ম জানান, আগুনে তাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। শুধু পরনের কাপড়গুলো ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।

১০ নাম্বার ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি। খাবার ভিডিও পাইনি মাথার ওপর দেওয়ার জন্য একটি তাঁবু। ৮ ডব্লিউ ক্যাম্পের বাসিন্দা মাওলানা রহিম উদ্দিন বলেন, আমার ঘর পুড়ে গেছে তাতে দুঃখ নেই। পাশের মসজিদটি পুড়ে যাওয়ায় নামাজ পড়তে পারছি না ঠিকমতো।

ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে পুড়ে যাওয়া ঘর গুলোর ওপর ত্রিপল দেওয়ার পর ক্যাম্পের দৃশ্য পাল্টে যাচ্ছে। খোলা আকাশ ঢাকা পড়তে শুরু করেছে বলে জানান, উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান পিপিএম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, অগ্নিকা-ে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে তিন শিশুসহ ১১ জন; পুড়ে গেছে ৯ হাজার ৩০০ বসতঘর; বাস্তুচ্যুত হয়েছে আশ্রিত ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা। ঘটনা তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছে ৮ সদস্যের একটি কমিটি।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও রেড ক্রিসেন্টসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে গতকাল দুপুরেও রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দিতে দেখা গেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপি এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলো আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের দ্রুত খাদ্য সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে। এসব সংস্থা ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাকে হট মিল (খিচুড়ি) বিতরণ করছে। এ ছাড়া ডব্লিউএফপি দুস্থ রোহিঙ্গাদের মাঝে ১৫ হাজার কার্টন উচ্চপুষ্টির বিস্কুট বিতরণ করেছে।

কক্সবাজারে ডব্লিউএফপির সিনিয়র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন, অগ্নিকা-ের পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে যথার্থ সহায়তা করা চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে এ দেশেরই খুচরা ব্যবসায়ী, স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকসহ মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সার্বিক সহযোগিতায়। দ্রুততর সময়ে সবাইকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর নির্যাতন-হত্যা-ধর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে দেশটিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসতি কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ক্যাম্প উখিয়াতে। উখিয়ার বালুখালী ৮ ডব্লিউ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোমবার বিকাল তিনটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর পর পুরো ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী আরও চারটি ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা; ৯ হাজার ৩০০ বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877