শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:০২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টিকা নেওয়ার পরও করোনা সংক্রমণের কারণ

টিকা নেওয়ার পরও করোনা সংক্রমণের কারণ

ড. মো. শফিকুর রহমান :

করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ এবং মৃত্যুঝুঁকি থেকে সুরক্ষার জন্য টিকার কোনো বিকল্প নেই। করোনা সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। টিকা গ্রহণের পরও কিছু ব্যক্তির করোনা আক্রান্তের খবরে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, টিকার কারণেই কি তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অথবা করোনা সংক্রমণে কি টিকা কাজ করছে না?

করোনার টিকা গ্রহণের পরপরই সংক্রমণ প্রতিরোধ বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) সৃষ্টি হয় না, টিকা আমাদের শরীরে ইমিউনিটি তৈরি করতে কয়েক সপ্তাহে পর্যন্ত সময় নেয়। যুক্তরাজ্যের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (সিডিসি) মতে, মানবদেহে করোনা টিকার ইমিউনিটি তৈরি হতে সাধারণত কয়েক সপ্তাহ লাগবে।

টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার অন্তত ১২ দিন আগে কখনো করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার মতো ইমিউনিটি সৃষ্টি হয় না। করোনার টিকা ইমিউনোসাপ্রেসড (হ্রাসপ্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) ব্যক্তিদের অনেক দেরিতে সুরক্ষা দিতে পারে বা ততটা সুরক্ষা নাও দিতে পারে। মডার্না ও ফাইজার টিকার পূর্ণ কার্যকারিতা শুরু হয় যথাক্রমে দ্বিতীয় ডোজের ১৮ দিন ও ৭ দিন পর এবং অক্সফোর্ড টিকাটি এর প্রথম ডোজ নেওয়ার ২১ দিন পর থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।

সুতরাং এর অর্থ হচ্ছে, যে কোনো ব্যক্তি টিকা নেওয়ার ঠিক আগে অথবা ঠিক পরেও (শরীরে ইমিউনিটি বিকাশের জন্য যে সময়ের প্রয়োজন তার আগে) কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকলে তিনি অসুস্থ হতে পারেন। এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, কোনো টিকাই করোনা সংক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না, তাই টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পরও কিছু মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক।

সিডিসির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ করোনাভাইরাস সংক্রমণে রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয় না এবং টিকা শুধু লক্ষণযুক্ত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে কি না, তা-ই ট্রায়ালে দেখা হয়েছিল। এমনকি করোনার টিকা প্রস্তুতকারীরা টিকার শটগুলো রোগের লক্ষণযুক্ত ও লক্ষণবিহীন উভয় ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় কি না, তা নিশ্চিত করতে এখনো ট্রায়াল (মূল্যায়ন) চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই, করোনার টিকা নেওয়ার পরই যে কেউ শতভাগ সুরক্ষিত তা ভাবার কারণ নেই।

করোনার টিকা থেকে কেউ সংক্রমিত হতে পারে না। কারণ, করোনার কোনো টিকাই জীবন্ত ভাইরাস বহন করে না তথা করোনার টিকা কাউকেই কোভিড-১৯ দ্বারা অসুস্থ করতে পারে না। তবে করোনাভাইরাস বারবার রূপ বা ধরন পরিবর্তন করে পরিবর্তিত হতে পারে বলে টিকা কম কার্যকর বা আদৌ কার্যকর না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার মতো প্রতিবছর নতুন করে করোনার টিকা আপডেটেড করার প্রয়োজন হতে পারে।

টিকা নেওয়া বা সুরক্ষিত হওয়ার পরও যে কেউ করোনাভাইরাসের লক্ষণবিহীন বাহক হতে পারেন এবং তাদের নাকের প্যাসেজ পথে ভাইরাস বহন করে তা কথা বলা, শ্বাস ফেলা, হাঁচি দেওয়াসহ বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে অন্যের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। এ জন্য শুধু টিকা গ্রহণের কারণে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে কেউ যেন মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা থেকে বিরত না থাকেন।

করোনার টিকা নেওয়ার পরও নিজেকে করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখা ও অন্যকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে হবে।

ড. মো. শফিকুর রহমান : অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877