স্বদেশ ডেস্ক:
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় দুদক সচিবের স্বাক্ষরে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেওয়ায় তা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। শুধু দদক সচিবের স্বাক্ষরে নোটিশ দেওয়ায় হাইকোর্ট অনেক আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন। পরে ওইসব খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল শুনানি করে আপিল বিভাগ দুদক সচিবের স্বাক্ষরে নোটিশ পাঠানোর বৈধতা দেন। এ ছাড়া যেসব মামলায় হাইকোর্ট খালাস দেন, সেসব মামলার আপিল মেরিটে (মূল যুক্তিতে) পুনঃরায় শুনানির নির্দেশ দেন।
দুদকের হিসাব অনুযায়ী এরকম পুনঃশুনানির জন্য ২৭-২৮টি মামলা হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় করা আপিল ইতোমধ্যে হাইকোর্টে পুনঃশুনানি হয়েছে। এর মধ্যে পুনঃশুনানিতে সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা, সাবেক মন্ত্রী মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলাল এবং সর্বশেষ গতকাল হাজী মো. সেলিমের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া পুনঃশুনানি করে সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহাজান ওমরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ খালাসের পর শাজাহান ওমর ও মুন্সীর ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে আপিল করেছে দুদক। আর ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর মায়াকে দ্বিতীয়বারের মতো খালাস দিলেও তার ক্ষেত্রে এখনো আপিল করা হয়নি। দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, মায়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে আপিল করার জন্য আবেদন দেওয়া আছে, তবে হাইকোর্টের রায়ের কপি না পাওয়ায় এখনো আপিল করা হয়নি।
খুরশীদ আলম খান আরও জানান, শুধু একটি যুক্তিতে হাইকোর্ট তাদের খালাস দিয়েছিলেন। আর সেটি হলো দুদক সচিবের স্বাক্ষরে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এর পর দুদক ওই সব খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় এবং আপিল বিভাগ দুদক সচিবের নোটিশ পাঠানোর বৈধতা দেন। এ ছাড়া পুনঃশুনানি করে মেরিটে আপিল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন। এ রকম ২৭-২৮টি মামলা হাইকোর্টে পুনঃশুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে যার বেশিরভাগেই সাজা বহাল রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২১ মার্চ ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে নাজমুল হুদা দম্পতির বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলায় একই বছরের ২৭ আগস্ট বিচারিক আদালতের রায়ে নাজমুল হুদাকে সাত বছর ও সিগমা হুদাকে তিন বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে হুদা দম্পতি হাইকোর্টে আবেদন করেন, যার ওপর শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে তারা খালাস পান। এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করে। এর ওপর শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় আপিল শুনানি করতে নির্দেশ দেন। এর পর পুনঃশুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে নাজমুল হুদা দম্পতির সাজা বহাল রাখা হয়। তবে সিগমা হুদার তিন বছরের সাজার মধ্যে যেটা কারাভোগ করেছেন সেটাকে সাজা হিসেবে গণ্য করে রায় দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া সাত বছরের সাজা বহালের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদা আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। বর্তমানে ওই আপিল বিচারাধীন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মীর নাসির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর গুলশান থানায় দুদক মামলা করে। এ মামলায় বিশেষ জজ আদালত মীর নাসিরকে ১৩ বছর ও মীর হেলালকে ৩ বছরের কারাদ- দেন। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মীর নাসির ও মীর হেলাল হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। ২০১০ সালের আগস্টে হাইকোর্ট মীর নাসির ও মীর হেলালের সাজা বাতিল করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে আপিল আবেদন করে দুদক। শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবা-ছেলের করা পৃথক আপিল হাইকোর্টে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট তাদের সাজা বহাল রেখে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে মীর হেলাল ও মীর নাসিরের আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এ ছাড়া বাকিদের কারও আপিল হাইকোর্টে পুনঃশুনানির অক্ষোয় এবং কারও কারও আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী।