সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

দুর্নীতিবাজদের হাইকোর্ট: সৃষ্টিকর্তার কাছে কী জবাব দেবেন

দুর্নীতিবাজদের হাইকোর্ট: সৃষ্টিকর্তার কাছে কী জবাব দেবেন

স্বদেশ ডেস্ক:

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের খেয়াঘাটের ইজারার টাকা আত্মসাতের মামলায় শুনানিকালে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘ঘুষ খেলেন, দুর্নীতি করলেন; কিন্তু এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিণতি কী? একজন মানুষ সর্বোচ্চ ৮০-৯০ বছর বেঁচে থাকে। এর পর চূড়ান্ত পরিণতি মৃত্যু। ঘুষ খেয়ে ও দুর্নীতি করে সৃষ্টিকর্তার কাছে কী জবাব দেবেন?’ গতকাল রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘জেলা পরিষদে কীভাবে দুর্নীতি হচ্ছে তা দেখে অবাক হচ্ছি। দশ বছর ধরে খেয়াঘাটের ইজারার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। এই যে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি, তখন এই পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কী করেছেন? দায়িত্ববোধ না থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে কীভাবে? দেশ ও জাতির প্রতি আমাদের সবার দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা থাকা উচিত। দুর্নীতির নানা খবর দেখে আমি মাঝে মাঝে হতভম্ব হয়ে যাই। যেখানে দুর্নীতি হয়, সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্নীতি বন্ধে কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? দুর্নীতি বন্ধে সরকার ও আদালতকে জানাতে হবে। আরও অবাক হই যে, বড়দের অঙ্গুলি হেলান ছাড়া পিয়ন-চাপরাশিদের দুর্নীতি করা সম্ভব কিনা।’

জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের আওতাধীন ২২টি খেয়াঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ৬টির ইজারাচুক্তি বাবদ যে পরিমাণ টাকা রাজস্ব খাতে জমা হওয়ার কথা, তা জমা হয়নি। দুর্নীতির মাধ্যমে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সত্য রঞ্জন ম-ল ২০১৮ সালে দুদকে একটি আবেদন দাখিল করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান; কিন্তু দীর্ঘদিনেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

এর পর ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্ট দুদকের চেয়ারম্যানকে ওই অভিযোগের বিষয়টি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে গত ২৭ জানুয়ারি দুদকের খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুল হাসান একটি মামলা করেন। এতে খেয়াঘাটের ইজারা নেওয়া ১০ জন, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী খলিলুর রহমান ও নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এসএম নাজমুল হোসেনকে আসামি করা হয়।

আদালতের নির্দেশনায় গতকাল মামলার বাদী দুদকের খুলনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুল হাসান ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব আদালতে হাজির হন। শুনানিতে দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুমোদনের পর এজাহার দাখিল করা হয়েছে। এখানে আসামি করার ক্ষেত্রে কোনো পিক অ্যান্ড চুজ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।

আদালত বলেন,  গত ১০ বছরে এই জেলা পরিষদে কোনো অডিট হয়েছে? দুদক কৌঁসুলি বলেন, নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে- একবার অডিট হয়েছে। আদালত বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ইজারার টাকা যে আদায় হয়নি, সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কি ঘুমিয়ে ছিল? যাদের আসামি করা হয়েছে এরা নিম্নমান সহকারী, এদের দায় কী? দুদক কৌঁসুলি বলেন, এই সময়ের মধ্যে ১৩ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে।

নিম্নমান ক্লার্ক হলেও বড় অফিসারদের এরা ভাঙিয়ে খায়। এর পরই তিনি এজাহার থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতকে পড়ে শোনান। তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত কর্মকর্তার কোনো ভুল হলে তাকে আদালত জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। এমনকি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন।

এ পর্যায়ে দুদক কৌঁসুলিকে হাইকোর্ট বলেন, আপনি কোনো যুক্তিতেই বোঝাতে পারবেন না যে, ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সম্মতি ছাড়া এ ধরনের দুর্নীতি করা সম্ভব। এ ধরনের মামলা আমরা সরাসরি বাতিল করে দেব। এখানে যদি কোনো অনিয়ম পাই, তা হলে মামলার বাদীকেও আসামি করার নির্দেশ দেওয়া হবে।

দুদক কৌঁসুলি বলেন, ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সম্মতি ছাড়া এ ধরনের দুর্নীতি সম্ভব নয়- আদালতের এই মনোভাব সঠিক। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষেই প্রকৃত দোষীরা বেরিয়ে আসবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ বলেন, ‘উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে’ চাপাইতেই এই মামলা করা হয়েছে। ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতি অধস্তনদের ওপর চাপিয়ে কারও অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ নেই। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি এখানে যোগ দিয়েছি। জেলা পরিষদের অনেক অনিয়ম আছে।

ইতোমধ্যে কিছু টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘বাকি টাকা উদ্ধারেও পদক্ষেপ নিন। যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনুন। দেশ ও জাতির জন্য কাজ করুন। যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, কোনো অনিয়ম থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শুনানি শেষে হাইকোর্ট হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের অনিয়মের নথি আদালতে দাখিল করতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এ সময় তার পক্ষে আইনজীবী মাইনুল হাসান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877