স্বদেশ ডেস্ক: সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় অভিশংসন বিচারে এবারও অব্যাহতি পেয়েছেন। মার্কিন আইনসভা ক্যাপিটল হিল ভবনে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে প্ররোচনা ও উস্কানি দেয়ার অভিযোগে সিনেটে ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিশংসনের বিচার অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান সিনেটরদের প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় এই বিচারে ট্রাম্পকে দন্ডিত করা যায়নি। বিচার শুরু হওয়ার আগেই এমনটা প্রতীয়মান হয়ে ছিল রিপাবলিকান বেশির ভাগ সিনেটর ট্রাম্পের বলয়ের বাইরে গিয়ে এই অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিতে অপারগ হবেন। এর আগে প্রথম অভিশংসন বিচারেও ট্রাম্প রেহাই পেয়ে যান।
হাউজ স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসি বলেন, আজ আমরা সিনেটে একদল রিপাবলিকান ভিতু কাপুরুষদের প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি মিচ ম্যাককনেলের নাম ধরে সমালোচনা করে বলেন, তাঁরা তাঁদের চাকরি বাঁচাতে ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। তাদের কাছে এছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। তাঁরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।
দেশ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রক্ষায় এরা কিছুই করতে পারেনি। ন্যান্সি বলেন, এরা এখানে (সিনেটে) তাহলে কেন এসেছে। প্যালোসি বলেন, যারা আজ দোষীকে রক্ষায় ভোট দিলো তা ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
অভিশংসন আদালতের সিদ্ধান্ত জানার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, উইল অল ওয়েইজ চ্যাম্পিয়ন। তিনি তাঁর আইনজীবী ও সিনেটরদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করায় ধন্যবাদ জানান। তিনি ডেমোক্রেট পার্টির নাম না নিয়ে সমালোচনা করেন। ট্রাম্প বলেন, সামনে এখন অনেক কাজ। ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট’ আন্দোলন এগিয়ে যাবে এবং এ আন্দোলন মাত্র শুরু হয়েছে বলে ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন।
সিনেটে অভিশংসন দণ্ড দেয়ার পক্ষে ভোট দেয়া রিপাবলিকান সিনেটরদের তোপের মুখতে পড়তে হচ্ছে। তাদের রাজ্য রিপাবলিকান কমিটি থেকে এসব আইন প্রণেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এখন দলের তালিকায় নাম থাকা এসব রিপাবলিকানদের উচ্ছেদ করার কাজ শুরু হবে। টানা ৫ দিনের সকল যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আজ ১৩ই ফেব্রুয়ারি শনিবার ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কি-না এই প্রশ্নে সিনেটে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বিচারকার্যে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী প্রবীণতম সিনেটর ভারমন্ড থেকে নির্বাচিত প্যাট্রিক লেহী ঠিক ৩ টা ৫০ মিনিটে গিল্টি অর নট গিল্ডি এই দুই ভাগে ভোট অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ফ্লোরে ভোটের জন্য প্রেরণ করেন।
ভোটে ৫৭ বনাম ৪৩ ব্যবধানে ট্রাম্প অব্যাহতি লাভ করেন। তাঁকে দণ্ডিত করতে প্রয়োজন ছিল মোট ৬৭ ভোট। আজ আরো ১ জন রিপাবলিকান সিনেটর সহ ৭ জন রিপাবলিকান সিনেটর ডেমোক্রেটদের
সাথে ট্রাম্পকে দোষী হিসাবে সাব্যস্ত করতে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। কিন্তু বিচার শুরু হওয়ার আগ থেকেই স্থির সিদ্ধান্ত নেয়া ৪৩ রিপাবলিকান সিনেটররা ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাঁকে খালাস দেয়ার পক্ষে ভোট দেন। ১শ’ আসনের মার্কিন উচ্চকক্ষ সিনেটে বর্তমান অবস্থান উভয়পক্ষ ৫০ বনাম ৫০। যে ৭ জন রিপাবলিকান সিনেটর পার্টি লাইন অতিক্রম করে ডেমোক্রেটদের সাথে এই ঐতিহাসিক
ভোটে অংশ নেন তাঁরা হচ্ছেন- সিনেটর রিচার্ড বার নর্থ ক্যারোলিনা, সিনেটর বিল ক্যাসিডি লুইজিয়ানা, সিনেটর সোসান কলিন্স মেইন, সিনেটর লিসা মোরকয়োস্কি আলাস্কা, সিনেটর বেন সেসি নেব্রাস্কা, সিনেটর পেট টোমি পেনসেলভেনিয়া ও সিনেটর মিট রামনি ইউটাহ। প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ১০ জন রিপাবলিকান আইন প্রণেতা ভোট প্রদান করেছিলেন। সিনেটে রিপাবলিকান দলের মাইনোরিটি নেতা মিচ ম্যাককনেল ট্রাম্পেকে খালাসের পক্ষে ভোট দেন।
পরে সিনেট ফ্লোরে দেয়া বক্তব্যে ক্যাপিটল ঘটনায় ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, নীতিগত ও বাস্তব সম্মতভাবে ট্রাম্প এ ঘটনার জন্য দায়ী। ম্যাককনেল বলেন, ট্রাম্পের বিচার যে কোনভাবে দেশের যে কোন ফৌজদারী আদালতে হতে পারে। তবে কিভাবে এবং কোন আদালতে হতে পারে ম্যাককনেল তার উল্লেখ করেননি। মার্কিন মিডিয়া এটাকে দ্বিচারিতা স্ববিরোধী ও মায়াকান্না বলে অভিহিত করেছে। ম্যাককনেল দন্ডিত হওয়ার পক্ষে তাঁর ভোট না দেয়ার যুক্তি হিসাবে বলেছেন, ট্রাম্প এখন ক্ষমতায় নেই। এজন্য এই বিচার অসাংবিধানিক। কিন্তু দেশের প্রখ্যাত আইনজ্ঞ যাঁরা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের প্রফেসর তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই এই বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক বলে মনে করেন। সিনেটে মেজোরিটি লিডার ডেমোক্রেট চাক শুমার ভোটের পর তাঁর সিনেটে দেয়া বক্তব্যে বলেন, জাতি রিপাবলিকান বন্ধুদের আজকের এই ভূমিকার কথা কোনদিন ভুলবে না। তিনি যে ৭ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের দণ্ডিত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁদের স্যালুট জানিয়ে বলেন, আপনারা যা করলেন আমি জানি কাজটি খুব সহজ নয়। আপনারা সঠিক কাজটি করেছেন। দেশ ও জাতি শ্রদ্ধার সাথে আপনাদের আজকের এই ভূমিকার কথা স্মরণ করবে।
এদিকে, এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান দলের কেন্দ্রেই রয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অন্য সব আইনি ঝামেলা হয়তো শুরু হবে আগামীদিনে। রিপাবলিকান দলের মধ্যপন্থিরা এখনও ঠিক ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অভিশংসন আদালতের কার্যক্রমের পর ট্রাম্পকে নিয়ে কিছুদিন নিস্পৃহ থাকার কথা বলা হচ্ছে। নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় আসলেও এখনও আমেরিকার রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে ডনাল্ড ট্রাম্প। এ অবস্থা থেকে বাইডেন প্রশাসন ঘুরে দাঁড়াতে চায়।