বিনোদন ডেস্ক: ‘আমি নেতা হতে চাই’ এটি একটি সিনেমার নাম। কিন্তু সিনেমাশিল্পের বাস্তব অবস্থা এখন এটাই। এখানে সবাই নেতা হতে চান। বছরে মানসম্মত সিনেমা নেই ১০টি, সংগঠন কিন্তু আছে ১৮টি! চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেন, এত এত সংগঠনের নেতা নির্বাচন করতে করতেই আমাদের সময় চলে যায়। সিনেমা হবে কখন? যারা কাজ করতে চান তারা হয়ে যান বিরক্ত। অনেকে মনে করেন, সংগঠন থাকা ভালো। এতে সবারই স্বার্থরক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে কোন সংগঠন কার স্বার্থে কাজ করছে, কোন স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে সেটা সাধারণ কেউ জানেন না।
শনিবার অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পসংশ্লিষ্টদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব লিমিটেডে’র নির্বাচন ২০২১। এক বছর মেয়াদি ফিল্ম ক্লাবের এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে ২৭৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ওমর সানী। প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি প্রার্থী আতিকুর রহমান লিটন পেয়েছেন ১৫৮ ভোট। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন মাহমুদুল হক পলাশ (৩১৫), নজরুল রাজ (২৯২), সৈয়দ রাফিউদ্দিন সেলিম (২২৭), ইঞ্জিনিয়ার এমএ জাহান (২৭৬), শ্রী অজিত রায় নন্দী (২৭২), মো. আবদুল্লাহ্ জেয়াদ (২৮৪), জাহিদ হোসেন (৩৩২), মোজাহারুল ইসলাম ওবায়েদ (৩২৫), এমএ কামাল (২৮২) ও জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর (৩১২)। নির্বাচনের আগে ফিল্ম ক্লাবের অনিয়মের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন ক্লাবের সাবেক নেতা মো. ইকবাল।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি ফিল্ম ক্লাবে এক বছরে প্রায় এক কোটি টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ফিল্ম ক্লাবের ৭০-৮০ লাখ টাকা উধাও। আমার প্রশ্ন সেই টাকা কোথায়? ফিল্ম ক্লাবের একজন সদস্য হিসেবে আমার সেটা জানার অধিকার আছে। অথচ আমি কিংবা আমরা সদস্যরা কিছুই জানি না।’ ফিল্ম ক্লাবের সদস্য অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মোহাম্মদ ইকবাল যে অনিয়মের কথা বলেছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ফিল্ম ক্লাবের অনিয়মের বিষয়ে একটি
তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অনিয়মের সঠিক তথ্য দেওয়ার কারণে তদন্ত কমিটির সেই লোকটিকে চোর বলে চাকরিচ্যুত করা হয়। যা এ ক্লাবের জন্য দুঃখজনক।’ এমন অভিযোগের বিষয়ে ফিল্ম ক্লাবের সাবেক সভাপতি অমিত হাসান বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, এর সত্যতা নেই। এক বছরে যা আয়-ব্যয় সব সাধারণ সভায় হিসাব দেখানো হবে।’ এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলেন, ‘এই টাকা যদি সিনেমায় বিনিয়োগ করা হতো তবে অনেকেই কাজ করতে পারতেন। কিন্তু এখন টাকার হিসাব নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি হবে।’
সিনেমার উন্নতির জন্য এত সংগঠন থাকার পরও হল খোলার পর সিনেমা সংকট নিয়ে প্রযোজক ও হল মালিকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ! এর মধ্যেই দুই সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সিনেমা নেই, হলও সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে প্রশাসক নিয়োগ বহাল রেখেছেন সুপ্রিমকোর্টের ফুল বেঞ্চ। ২৮ জানুয়ারি এ আদেশ দেন আদালত। এ আদেশের ফলে গত ৯ ডিসেম্বর নেওয়া সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিত্রনায়ক ও প্রযোজক জায়েদ খান।
এর আগে গত বছর ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির ২০১৯-২১ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির ২০১৯-২১ মেয়াদের নির্বাচনের অনিয়মের বিরুদ্ধে জায়েদ খানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবকে অভিযোগের বিষয়সমূহ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
আদেশে আরও বলা হয়, প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নির্বাচন বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু ও সাধারণ সম্পাদক পদে সামসুল আলম নির্বাচিত হয়েছেন বিষয়টির সত্যতা রয়েছে। তাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির ২০১৯-২০২১ কার্যনির্বাহী পরিষদের কমিটি বাতিল করে ওই সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। তার পর গেল ডিসেম্বরে চেম্বার জজের দ্বারস্থ হয়েছিল প্রযোজক সমিতি। শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্ব পালনের অনুমতি পেয়েছিল। সুপ্রিমকোর্টের ফুল বেঞ্চের আদেশের ফলে বাতিল হয়ে গেল সে সিদ্ধান্ত। চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সংগঠনটিরই যখন এই অবস্থা, তখন সহজেই বোঝা যায় চলচ্চিত্রের অবস্থা কী?
এর মধ্যে আগামী ২ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে। গত ২৪ জানুয়ারি চলচ্চিত্র পরিচালকদের স্বার্থ সংরক্ষণে গঠিত সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
আলোচনায় আছেন কাজী হায়াৎ, সোহানুর রহমান সোহান, জাকির হোসেন রাজু, এসএ হক অলিকসহ অনেকেই। প্রতিবারের মতো এফডিসিতেই ভোটগ্রহণ করা হবে। করোনার কারণে নির্বাচনে কিছুটা বিলম্ব হলেও এবারের নির্বাচনে ৪টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারগুঞ্জন চলছে।