স্বদেশ ডেস্ক: ক্লাস কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি শুরু করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার এখন অনেকটা কমে যাওয়ায় সরকার স্কুল-কলেজ খোলার পরিকল্পনা করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঠদানের উপযোগী করে তোলার নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধোয়া-মোছার কাজ শুরু করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে ফের চালু হবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঘোষণা করবে সরকার। তবে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রণীত গাইডলাইনটি বাস্তবায়ন করা কিছুটা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে জীবাণুুুমুক্ত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবন, চত্বর ও পুরো এলাকা, প্রতিষ্ঠানের ছোট উপকরণগুলো জীবাণুুুমুক্তকরণ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও উপযুক্ত সরঞ্জাম দিতে হবে। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি ৩০ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেট ও ৬০ জন ছেলে শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেট ব্যবহার- এই অনুপাতে টয়লেট সংখ্যা বিবেচনা করার চেষ্টা করতে হবে। পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রতিটি টয়লেটে স্যানিটারি সরঞ্জাম (সাবান ও পানি অথবা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ও টিস্যু পেপার) রাখতে হবে। প্রয়োজনে নতুন করে হাত ধোয়ার স্থান, টয়লেট স্থাপনের পরিকল্পনা নিতে হবে।
এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে। যেমন- প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সংশ্লিষ্ট সবার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপে কন্টাক্টলেস থার্মোমিটার স্থাপন ও প্রতিদিনের তথ্য সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষক ও স্টাফদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নিতে হবে। এ প্রশিক্ষণে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে তা হলো- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্বের বিধি, হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম, মাস্ক পরার নিয়ম, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার, কফ ও থুতু ফেলার শিষ্টাচার ইত্যাদি।
সরকারের এমন নির্দেশনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম রনি আমাদের সময়কে বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার এসব নির্দেশনা দিয়েছে। এটি আমাদের জন্য মানা বাধ্যতামূলক। তবে আমাদের মতো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় এর জন্য ব্যয় নির্বাহ করাটা কষ্টকর হবে। কারণ গত বছরের টিউশনি ফি পাইনি অভিভাবকদের কাছ থেকে। এখন আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি একটা ব্যয়ের চাপ। আমার প্রতিষ্ঠান শহরে, এর পরও শিক্ষকদের কাছ থেকে, কমিটির কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার পরিকল্পনা নিয়েছি।
তিনি বলেন, সারাদেশে এমপিও-ননএমপিও প্রায় ৪৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। করোনায় প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা যে সামান্য বেতনভাতা পেয়েছেন তা দিয়ে পেটেভাতে চলছেন। টিউশন ফি ছিল আয়ের বড় মাধ্যম, সেটি তো বন্ধ। এখন আমরা কোথায় থেকে টাকার ব্যবস্থা করব। অন্তত এ ব্যয়ের জন্য একটা অর্থ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। নয়ত আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ গাইডলাইন বাস্তবায়নে সক্ষম হবে না।
গতকাল সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আঙিনা ঝাড়– দিচ্ছেন। জীবাণুনাশক দিয়ে ক্লাসরুম ধোয়া-মোছা করছেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, ক্লাস কার্যক্রম না হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। নিয়মিত দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া এখন ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে। সরকারের অনুমতি পেলে যেন ক্লাস শুরু করা যায়, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ধানমন্ডির লেক সার্কাস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বলেন, আমাদের মতো বেসরকারি স্কুলগুলোয় এসব নিয়মকানুন বাস্তবায়ন করতে আর্থিক একটা সঙ্গতি প্রয়োজন। করোনায় বন্ধ থাকায় আমাদের অভিভাবকরা বেতনই দেননি। এখন এ বিনিয়োগ করাটা আমাদের জন্য কষ্টকর।
তেজগাঁওয়ের একটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সহজ। তবে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য বিষয়টি একটু ব্যয়সাপেক্ষ। সরকারের এ খাতে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া উচিত।