স্বদেশ ডেস্ক: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট অবৈধ বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া অবৈধ সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সব ধরনের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলা হচ্ছে। দীর্ঘ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে এবং ভিন্ন মত দমনের উদ্দেশে তড়িঘড়ি করে অনিয়মের বৈধতা দিতে সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলেও চর্চা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়র মঞ্জুরী কমিশন বলছে, এ ঘটনার ফলে সিন্ডিকেটের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিনষ্ট হয়েছে। আর সিনেট সদস্যরা বলছেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গঠিত সিন্ডিকেটের সব সিদ্ধান্তই অবৈধ। দ্রুত এসব সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হবেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত প্রদানকারী ফোরাম সিন্ডিকেট। আইন অনুযায়ী ১৭ জন পদস্থ ব্যক্তিকে নির্ধারিত যোগ্যতা-দক্ষতার ভিত্তিতে সিন্ডিকেটের সদস্য করতে হবে। অথচ সেই সিন্ডিকেটেই অনিয়মের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে পাঁচ সদস্যকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে দুজনকে অনিয়মের বৈধতা দিতে সদস্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০ এর ২৪। (১) এর (গ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে মনোনীত দুইজন ডিনকে সিন্ডিকেটের সদস্য করতে হবে।’ আবার আইনের ২৮। (১) এর (৫) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক স্কুলের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্টভাবে অধ্যাপকদের মধ্যে তার ডিন পদ আবর্তীত হবে এবং তিনি দুই বছরের মেয়াদে তার পদে বহাল থাকবেন।’
আইনের কোথাও ভারপ্রাপ্ত ডিনকে সিন্ডিকেট সদস্য করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ, বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. ফায়েকুজ্জামান মেয়াদের একেবারে শেষ দিকে এসে সিন্ডিকেটের ২১১তম সভায় নতুন করে ৫ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই পাঁচজন হলেন-চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ফজলুর হক, খানজাহান আলী হলের প্রভোস্ট ড. মো. আব্দুল জব্বার, প্রিন্ট মেকিং ডিসিপ্লিনের প্রধান নীহার রঞ্জন সিংহ ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচীব-২ ওয়াহিদা আক্তার।
আর নতুন এসব সদস্যদের মধ্যে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ফজলুর হকের অন্তরভূক্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন খোদ ইউজিসির সদস্য ও খুবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর।
নতুন এসব সদস্যদের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ২১২তম সিন্ডিকেট সভাতেই তিন শিক্ষককে বহিস্কারও অপসারণের মতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আবার শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করার অভিযোগে এই সভাতে দুই শিক্ষারর্থীকে দুই বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশিনের (ইউজিসি) সদস্য ও খুবি সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিনদের সিন্ডিকেট সদস্য করা অনিয়ম। ভারপ্রাপ্ত ডিন উপাচার্যের মনোনীত বিধায় সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্যের অনিয়মের বিরোধিতা করার সামর্থ রাখেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কোনো ভারপ্রাপ্ত ডিনকে সিন্ডিকেট সদস্য করার নজির নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শুধুমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে যারা পূর্নাঙ্গ ডিন হয়ে থাকেন তাদেরই কেবল সিন্ডিকেটের সদস্য করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’
খুবির সিনেট সদস্য ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘অনিয়মের মাধ্যমে গঠিত সিন্ডিকেট সভায় এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা সবই আইনত অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সিন্ডিকেট পুনঃগঠন, নিয়োগ বোডের্র অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি ও বিভিন্ন দুর্নীতিতে সম্পৃক্তদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে উপাচার্য গত দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম সিনেটের কোনো অধিবেশন ডাকেননি। তাই প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সিনেট সদস্যরা আদালতের স্মরণাপন্ন হবো।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফায়েকুজ্জামান বলেন, ‘কীভাবে সিন্ডিকেট গঠিত হবে তা স্পষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়র আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উপাচার্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো স্থান নেই। বর্তমান সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই গঠন করা হয়েছে। এখানে বিতর্কের সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য কিছু মানুষ আইনের অপব্যাখ্যা করছেন।