স্বদেশ ডেস্ক: আজ ২৪ জানুয়ারি। দিনটি ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। মূলত ’৬৮ সালের ডিসেম্বর মাসের গোড়ার দিকে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আহ্বানে এই গণ-আন্দোলনের সূচনা। তা ক্রমেই জোরদার হতে থাকে এবং ঢাকা থেকে মফস্বল শহরগুলো হয়ে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।
জানুয়ারিতে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি তদানীন্তন সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এক হয়ে গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এতে ছাত্র-গণ-আন্দোলন আরো প্রবল আকার ধারণ করে।
২৪ জানুয়ারি পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মোতাবেক ছাত্র-জনতা ঢাকায় সচিবালয় অবরোধ করেছিল। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছিল বিভিন্ন স্কুলের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরাও। এদের একজন মতিউর রহমান মল্লিক। পিতা আজহার আলী মল্লিক ছিলেন ব্যাংকের কর্মচারী। মতিউর বখশিবাজার এলাকার নবকুমার ইনস্টিটিউটে দশম শ্রেণীতে পড়তেন। বিজ্ঞান বিভাগের এই মেধাবী ছাত্র কৈশোরেই অর্জন করেছিলেন দেশপ্রেমের শিক্ষা এবং নাগরিকের দায়িত্ববোধ।
২৪ জানুয়ারি সচিবালয় ঘেরাওকালে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের পুলিশবাহিনী গুলি ছোড়ে। এতে শহীদ হন কিশোর মতিউর রহমান। তিনি ওই দিন ছিলেন অধিকার আদায়ে অকুতোভয়, জনতার প্রতিবাদী মিছিলের পুরোভাগে। তার আত্মত্যাগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অনেক তীব্র করে তোলে এবং তা প্রচণ্ড রূপ নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে উন্নীত হয়। এর অপ্রতিরোধ্য পরিণতিতে একনায়ক সেনাশাসক, স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের এক দশকব্যাপী কুশাসনের পতন ঘটে ২৫ মার্চ। অবশ্য ওই দিন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানের পরিসমাপ্তি এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিরাট প্রহেলিকা হয়ে আছে।
আর শহীদ মতিউরের মৃত্যু দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে।