স্বদেশ ডেস্ক: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে তিন লাখ ৫৭ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, যা এই খাতের মোট শ্রমিকের ১৪ শতাংশ। একই সময়ে বন্ধ হয়েছে ২৩২ গার্মেন্টস। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১৮০টি।
গতকাল শনিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় একটি জরিপে পাওয়া এই তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডি ও ব্র্যাকের ম্যাপড ইন বাংলাদেশ প্রকল্প যৌথভাবে এই আলোচনাসভার আয়োজন করে। দেশে করোনা ভাইরাস সংকট শুরুর সাত মাস পর গত অক্টোবরে জরিপ পরিচালনা করে এই চিত্র পায় সিপিডি।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, এই সময়ে ২৩২টি বা ৭ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়েছে। লে অফ ঘোষণা করেছে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ কারখানা। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানার মধ্যে ৭০ শতাংশ তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পেরেছে। আর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের আরও যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা, তা দিতে পেরেছে মাত্র ৪ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জের বড় কারখানাগুলোতে এই সমস্যা দেখা গেছে বলে জানান তিনি। মহামারীতে বন্ধের পর ফের খুললেও ৬০ শতাংশ কারখানায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানার উদ্যোক্তাদের কীভাবে আবার ব্যবসায় ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করেছে সিপিডি।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, ১৩ শতাংশ কারখানা এখন মহামারী প্রতিরোধে কোনো ধরনের নিয়ম মানছে না। এই সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শুরুতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা পরিমাপের উদ্যোগ নিলেও ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে।
সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, সেখান থেকে ঋণ পেতে ৫২ শতাংশ কারখানা আবেদনই করেনি বলে জরিপে উঠে এসেছে। ৩৩ শতাংশ কারখানা ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করেনি। ছোট একটি অংশ বলেছেÑ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারার আশঙ্কা থেকেই তারা আবেদন করেনি।
জরিপে আরও উঠে আসে, এখনো ৫০ শতাংশ কারখানা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে না। মহামারীর প্রভাবে ৫ শতাংশ কারখানা তাদের ব্যবসার আকার ছোট করার কথা বলেছে। মাত্র ৪ শতাংশ গার্মেন্টস ব্যবসার নতুন সুযোগ পাওয়ার কথা বলেছে।
সভায় সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, মহামারীর প্রথম দিকে তৈরি পোশাক খাতের কিছু কারখানা বন্ধ হলেও এখন আবার পর্যায়ক্রমে সেগুলো খুলতে শুরু করেছে। অর্ডারও আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো শ্রমিকদের ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন নিশ্চিত করেননি মালিকরা।
সভায় বিকেএমইএর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হাতেম বলেন, সরকার পোশাক খাতের জন্য যে বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, তা পাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে, তারাই ওই ঋণ পাচ্ছেন, যাদের সঙ্গে নেই তারা পাচ্ছেন না।