স্বদেশ ডেস্ক:
ভাস্কর্যের পক্ষ-বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় কবির হোসাইন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রলীগের এক নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি কবি জসীম উদদীন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গতকাল শনিবার রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠনের নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে কবির হোসাইন (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কবি জসীম উদদীন হল শাখা ছাত্রলীগ)-কে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।
জানা গেছে, কবির হোসাইন সম্প্রতি তার ফেসবুক আইডিতে ভাস্কর্যের পক্ষ-বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাস তিনি লেখেন-
‘‘সেখানে বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (সা.) বলেছিলেন :
‘আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি –
১.আল কুরআন
২.আল হাদিস
যদি তোমারা এ দুটোকে আঁকড়ে ধর, তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।’
অথচ আজ আমরা এ দুটার আশেপাশেও নেই , সূরা ফাতিহা পড়তেই ৩২টা দাঁতের মাঝে মহাযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়, শুক্রবার ছাড়া মসজিদের আশেপাশেও যাওয়া হয় না, উত্তরাধিকারসূত্রে মুসলমান হয়েছি, কুরআন হাদিসের দুই অক্ষর জ্ঞানও নাই, অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুফতি সাহেব সেজে ফতোয়া দিয়ে বেড়াচ্ছি! হারামকে হালাল বানাচ্ছি আর হালালকে হারাম !!
তাদের যুক্তিগুলো বেশ দারুণ :
#রহিমুদ্দী মুসলমান, সে নামাজ পড়ে না, তাই আমি নামাজ না পড়লেও চলবে, তাই না??
#ওমুক দেশে, তমুক দেশে ভাস্কর্য আছে, মূর্তি আছে, সুতরাং মূর্তি বানানো সওয়াবের কাজ !!
#ওমুকের ঘরে কুরআন নাই, তাই কুরআন পড়া হারাম!
#মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে কোন মুফতি নাই, মাওলানা নাই, হুজুর নাই, তাই এদেশ নিয়ে কথা বলার অধিকার তাদের নাই, তাই না?? তবে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের ৭ জনই মুসলমান, বীর উত্তম ৬৮ জনের মধ্যে ৬৭ জন মুসলমান, বীরবিক্রম ১৭৫ জনের মধ্যে কতজন মুসলমান? খবর আছে ? মাত্র ১৭২ জনই মুসলমান ! বীরপ্রতীক ৪২৬ জনের মধ্যে কতজন মুসলমান ?? খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার!
আর এরা ইসলামটা কাদের কাছ থেকে শিখছে??
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন :
‘যদি স্বয়ং মুহাম্মাদ (সা.) আমার নামে তার কথা রচনা করে চালাত, তবে তার দক্ষিণ হস্ত চেপে ধরতাম, আর কেটে ফেলতাম তার গ্রীবা! তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতো না’ (সূরাহ হাক্কাহ)
কুরআনের একটা আয়াতও যদি কেউ বিকৃত করে তার পরিণতি কি হতে পারে, কল্পনা করা যায়?
মামুনুল হক যদি কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করে, তার কন্ঠনালী কেটে দাও, যদি কুরআন ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, আল্লাহ এটাকে হারাম করে, তবে কোন বাপের ব্যাটা এটাকে হালাল করার সাহস রাখে ??
কুরআনের বিরোধিতা যেই করবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াত ১ সেকেন্ডও অপেক্ষা করবে না ঈমানদাররা! হোক সে মামুনুল হক, মুজিব, জিয়া! হোক সে আওয়ামী, বিএনপি, বামাতি বা জামাতি!
ইসলামের প্রতিনিধিত্ব রহিমুদ্দ,সলিমুদ্দি, কলীমুদ্দিরা করে না, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল করেন!
ইসলাম শিখতে হলে কুরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জন করতে হবে, মনগড়া যুক্তি খাটবে না!
একটা কথা মাথায় রাখবেন,
আল্লাহর কোন আইন যদি আপনি না পালন করতে পারেন, সেটা অন্য কথা! তবে যদি তার কোন আইনের বিরোধিতা করা তো দূরের কথা, অস্বীকারও যদি করেন, আর নিজেকে যতই ঈমানদার দাবি করেন না কেন, মনে রাখবেন, আপনি খাঁটি মুসলমান না, পাক্কা মুনাফিক! আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করাও খাঁটি মুসলমানের জন্য ফরজ!’’
এই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কবির হোসাইনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ওই হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ এক নেতা নিশ্চিত করেছেন।