রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

ভার্চুয়াল ও নিয়মিত আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি

ভার্চুয়াল ও নিয়মিত আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের কারণে নিয়মিত আদালতের পাশাপাশি প্রায় সাত মাস ধরে ভার্চুয়াল আদালতে বিচারকার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি ফিজিক্যাল বা সাধারণ আদালতেও বিচারকার্যক্রম চলছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এখন পুরোপুরি ভার্চুয়াল। তবে হাইকোর্টে নিয়মিত আদালতের পাশাপাশি ভার্চুয়াল বেঞ্চ রয়েছে। আপিল বিভাগে দু’টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ রয়েছে। হাইকোর্টে ৩৫টি ভার্চুয়াল বেঞ্চের পাশাপাশি ১৮টি নিয়মিত বেঞ্চ রয়েছে। আর নিম্ন আদালতেও ভার্চুয়ালের পাশাপাশি নিয়মিত আদালতে বিচারকার্যক্রম চলছে।

বর্তমানে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভার্চুয়াল আদালতের পাশাপাশি নিয়মিত আদালতের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন বলে আইনজীবীরা মনে করেন। হাইকোর্টের নিয়মিত রিট বেঞ্চ বাড়ানোর পাশাপাশি রিট বেঞ্চ এবং আগাম জামিনের জন্যও ফৌজদারি মোশন বেঞ্চ বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন তারা।

আইনজীবীদের দাবি যথাসময় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আদালতের বা বেঞ্চের স্বল্পতা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে প্রথমত আগাম জামিনের বেঞ্চ এবং দ্বিতীয়ত রিট আবেদনের বেঞ্চ বাড়ানো দরকার।

এ বিষয়ে প্রবীণ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যাপারে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে আমাদের ইন্টারনেট সমস্যা রয়ে গেছে। এই সমস্যাগুলো দূর করে বর্তমান সময়ে ফিজিক্যাল কোর্টের চেয়ে ভার্চুয়াল কোর্ট কিছু দিনের জন্য অন্তত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের আইনজীবী ও বিচারকরা যাতে সতর্ক থাকতে পারেন, সেই ব্যাপারে বর্তমান অবস্থায় ভাচুয়াল কোর্ট ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা উচিত বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, মামলার ফাইলিং সাধারণ নিয়মে হবে। ভার্চুয়ালি হবে শুধু আইনজীবী ও আদালতের বক্তব্য। যেহেতু আমাদের বেশির ভাগ বিচারক অনেক বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাই তাদের পক্ষে রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না। সেই ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ভার্চুয়াল কোর্ট চলতে পারে। সাথে সাথে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে ফিজিক্যাল কোর্টও চালানো উচিত। ভার্চুয়াল ও ফিজিক্যাল উভয় কোর্টই চলা উচিত।

তবে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সব কিছু যেখানে স্বাভাবিকভাবে চলছে, সেখানে ফিজিক্যাল কোর্ট চলতে সমস্যা থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, সব কিছু চলছে, কোর্ট আর কী দোষ করল? এমন তো নয় যে ঘরে বসে থাকলে আক্রান্ত হচ্ছে না। মানুষ তো ঘরে থেকেও আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে যত দূর সম্ভব, স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক আমরা নিশ্চিত করেছি। সমিতিতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা যাতে সুরক্ষা পায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ফিজিক্যাল কোর্টগুলো না হওয়ার কারণে আগাম জামিনপ্রার্থী মানুষ জামিনের আবেদন করতে পারছেন না। রিট আবেদন শুনানি করা দরকার। কারণ ফিজিক্যাল ও অ্যাকচুয়াল মিলে বর্তমানে যে রিট বেঞ্চগুলো আছে সে বেঞ্চগুলো অপ্রতুল। যথাসময় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আদালতের বা বেঞ্চের স্বল্পতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমত আগাম জামিন, দ্বিতীয়ত রিট আবেদনের জন্য বেঞ্চ বাড়ানো দরকার।

ব্যারিস্টার কাজল আরো জানান, গত ডিসেম্বর মাস থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের ১০৪ জন আইনজীবী মারা গেছেন। তবে কারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং কতজন আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কারণ করোনায় আক্রান্ত সবাই তথ্য প্রকাশ করেন না।

অপর দিকে সব আদালত ভার্চুয়ালি করা উচিত বলে মনে করেন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা আদালতে যে মামলা ফাইল করি, তা আগে স্বাভাবিক আদালতে যেভাবে ফাইল করতাম সেই একই পদ্ধতিতে ফাইল করছি। ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হলে প্রথম দিকে অনলাইনে ফাইলের ডকুমেন্ট পাঠাতে হতে। এখন সরাসরি কোর্টে জমা দিচ্ছি। আগের মতো অ্যাফিডেভিট করে এভাবে মামলা ফাইল করার আরেকটি সুবিধা হলো এখন সিরিয়ালের জন্য তদবির করতে হয় না। ফাইল করার সময় টেন্ডার বা আপিল নম্বর অনুযায়ী সিরিয়াল হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন কিছু আদালত ভার্চুয়াল এবং কিছু ফিজিকাল চলছে। আপিল বিভাগ পুরোপুরি ভার্চুয়াল চলছে। আর হাইকোর্টের অর্ধেক বেঞ্চ ভার্চুয়াল আর অর্ধেক ফিজিক্যাল চলছে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যেহেতু করোনার সেকেন্ড ওয়েভের মধ্যে আছি। সে কারণে মামলার ফাইলিং সিস্টেম আগের মতো সিস্টেম ঠিক রেখে সব কোর্ট ভার্চুয়ালি করা উচিত। এতে আদালতে মানুষের ভিড় কমবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট পুরোপুরি ভার্চুয়াল হওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, নিম্ন আদালতের সব কার্যক্রম অন্ততপক্ষে শীতকালীন সময় বা আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাস পর্যন্ত ভার্চুয়ালি করা উচিত। কারণ প্রচুর লোক, জামিন, আত্মসমর্পণ ও রিমান্ড শুনানির জন্য হাজির হন। নিম্ন আদালতে ভিড় থাকায় আগের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন অনুযায়ী নিম্ন আদালত ভার্চুয়াল হওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, আগাম জামিনের জন্য ক্যামেরার সামনে ভার্চুয়ালি কোর্টে উপস্থিত করা সম্ভব। আইনে বলা আছে ভার্চুয়াল উপস্থিতিও উপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে। আর কোর্ট যদি নির্দিষ্ট কোনো স্থানে আসামিদের আসতে বলে সেখান থেকেও ভার্চুয়াল করা যায়। আর আমরা পিটিশনে যেভাবে আদালতের সামনে উপস্থিতি দেখাই ভার্চুয়ালিও সেভাবে দেখানো সম্ভব। কারণ ফিজিক্যাল কোর্টে আইনজীবীরা দায়িত্ব নিয়ে চিহ্নিত করেন। একইভাবে ভার্চুয়াল কোর্টেও আগাম জামিন বা আত্মসমর্পণ করানো সম্ভব।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদও সব কোর্ট ভার্চুয়াল চান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যগত কারণে সব কোর্ট ভার্চুয়াল হওয়া প্রয়োজন। ভার্চুয়াল হলে আদালতে লোকসমাগম কমে যাবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক আইনজীবী মারা গেছেন। আর সিনিয়র আইনজীবীরা বাসায় বা চেম্বারে বসে ভার্চুয়াল কোর্টে অংশ নেন। এ ক্ষেত্রে চেম্বারে বা বাসায় মামলা নিয়ে ক্লায়েন্টরা যাবেন। আর ক্লার্করা অ্যাফিডেভিটসহ অন্য প্রয়োজনে কোর্টে আসবেন।

তবে ভার্চুয়াল আদালতের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে ফিজিক্যাল কোর্টের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান আইনজীবী এ এইচ এম কামরুজ্জামান মামুন। তিনি বলেন, ভার্চুয়াল আদালতে মামলা করতে ইন্টারনেটে প্রায়ই সমস্যা হয়। নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়, হ্যাং হয়ে যায়। তিনি দেখান একবার ভার্চুয়াল কোট থেকে বেরিয়ে আবার প্রবেশের জন্য প্রায় ২৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছেন কিন্তু প্রবেশ করতে পারছেন না। তিনি আরো বলেন, মোশনের ক্ষেত্রে সাধারণ দু’টি থেকে তিনটি কোর্ট ম্যানেজ করা যায়। কিন্তু ভার্চুয়াল কোর্টে মোশন করতে সমস্যা হয়। তিনি বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টের পাশাপাশি রিট ও ফৌজদারি মোশন সাধারণ কোর্ট আরো বেশি থাকা প্রয়োজন।

আর আগাম জামিনের কোর্টের স্বল্পতার কথা তুলে ধরে আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ জানান, গত রোববার ১৬টি পিটিশনে ১২৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীর জামিন আবেদন করা হয়। গত ২৫ নভেম্বর জামিন আবেদন হাইকোর্ট বেঞ্চের তালিকায় আসায় আসামিরা আদালতে আসেন। তবে বেঞ্চের একজন বিচারপতি ছুটিতে থাকায় শুনানি হয়নি। এখন ওই আদালত একজন বিচারপতির একক বেঞ্চ হওয়ায় আর তালিকায় আসছে না। তিনি বলেন, হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চ আগাম জামিন আবেদন শোনেন। জামিন আবেদনের বেঞ্চ আরো বাড়ানো প্রয়োজন।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র ব্যারিস্টার মো: সাইফুর রহমান বলেন, ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে এখন নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ কোর্টে সংখ্যা বাড়ানো বা আদালত পুরোপুরি ভার্চুয়াল করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877