শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় টিআইবি’র ১৫ সুপারিশ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় টিআইবি’র ১৫ সুপারিশ

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা মোকাবিলায় সরকারের কিছু কার্যক্রমে উন্নতি হলেও গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমে এখনো সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান। স্বাস্থ্যখাতে গভীরভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি করোনা সংকটে প্রকটভাবে উন্মোচিত হওয়ার পাশাপাশি এই সংকটকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির নতুন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সরকারের সংকোচনমূলক নীতি প্রয়োগের (সেবা ও নমুনা পরীক্ষা হ্রাস) মাধ্যমে শনাক্তের সংখ্যা হ্রাস হওয়াকে ‘করোনা নিয়ন্ত্রণ’হিসেবে দাবি এবং রাজনৈতিক অর্জন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ- দ্বিতীয় পর্ব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গবেষণায় প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে টিআইবি আইনের শাসন, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি, সক্ষমতা বৃদ্ধি, অংশগ্রহণ ও সমন্বয় এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এই চারটি বিষয়ের অধীনে ১৫ দফা সুপারিশ উত্থাপন করে।

উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের ক্রয়ে সরকারি ক্রয় আইন ও বিধি অনুসরণ করতে হবে, করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য দ্বিতীয় পর্যায়ের আঘাত মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষার সুবিধা সব জেলায় সম্প্রসারণ করতে হবে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালের সেবাসমূহকে (আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি) করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে, দেশজুড়ে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার জন্য সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে নিয়মিত সভা করতে হবে এবং করোনায় সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, করোনা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে যে বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করতে হবে, গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে সরকারি ক্রয়, করোনা সংক্রমণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, ত্রাণ ও প্রণোদনা বরাদ্দ ও বিতরণ ইত্যাদি বিষয়ে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বা সংশোধন করতে হবে এবং হয়রানিমূলক সব মামলা তুলে নিতে হবে, বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই ও হালনাগাদ করতে হবে এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, স্বাস্থ্যখাতে ক্রয়ে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে এবং অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সাময়িক বরখাস্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণসহ মামলা পরিচালনা করতে হবে। এসব জনপ্রতিনিধিদের পরবর্তী যেকোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা বাতিল ঘোষণা করতে হবে, সম্মুখসারির সব স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাপ্য প্রণোদনা দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষাগার ও নমুনা পরীক্ষায় ঘাটতি রয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণে ঘাটতি এবং পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নেও ঘাটতি দেখা গেছে। বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নতুন করে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করলেও বাংলাদেশে কোভিডের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি হাসপাতালে রোগী না থাকার কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম বাতিল করে সাধারণ চিকিৎসা চালুর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সময় দেশে কোভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, এখনো বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি রয়ে গেছে।

গবেষণায় নমুনা পরীক্ষায়ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। যাচাই না করার ফলে লাইসেন্সবিহীন এবং ভুয়া হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা পরীক্ষা করার চুক্তি সম্পাদন করেছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন এলাকার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়। এভাবে এই প্রতিষ্ঠান সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

গবেষণা অনুযায়ী এখনো নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে ৩৪ দশমিক ৪শতাংশ সেবা গ্রহীতাকে তিন বা ততোধিক দিন প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়াও জরিপে সেবাগ্রহীতাদের ৯ দশমিক ৯ নমুনা পরীক্ষায় ভুল প্রতিবেদন পাচ্ছেন। যথাসময়ে প্রতিবেদন না পাওয়ায় অনেক প্রবাসীর কর্মক্ষেত্রে ফেরার ক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ মতামত উপেক্ষা করে এখনো আমলানির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা বিদ্যমান। শীত মৌসুমে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতির অভাব। শহরকেন্দ্রিক ও বেসরকারি পর্যায়ের বাণিজ্যিক সেবা সম্প্রসারণ, পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এই সেবা থেকে বঞ্চিত করছে এবং হয়রানি ও অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত প্রণোদনা কর্মসূচির ক্ষেত্রেও সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত অংশের অনুকূলে পক্ষপাত করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা সেবা ও প্রণোদনার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে এখনও পৌঁছেনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877