রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা সবার

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা সবার

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ৬৭ দিন বন্ধ থাকে গণপরিবহন। এরপর মাস্ক ব্যবহারসহ বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে ৩১ মে থেকে গণপরিবহন চালু হয়। সামনে শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

গত রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শীতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে ধরে নিয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহনে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন পথে চলাচলকারী ৬টি বাসের অধিকাংশ যাত্রীর মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। চালক ও সহকারীরাও মাস্ক ব্যবহারে উদাসীন। দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না পরিবহনকর্মীরা। করোনার প্রকোপ কমার পর যান চলাচল শুরু হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে দেখা যায় সহকারীদের। এখন আর সেই চিত্র নেই। আগের মতোই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, দেশে কোভিড ১৯-এর মতো মহামারী চলছে।

গতকাল মিরপুর থেকে বিকল্প পরিবহনে ওঠে দেখা যায়, অনেকেই মাস্ক পরছেন না। কারও থুতনিতে দেখা গেছে মাস্ক। স্বাস্থ্য সচেতনতা বলতে মাস্ক হাতে-পকেটে বা থুতনিতে রাখাকেই ধরে নিচ্ছে কেউ কেউ। একই অবস্থা লাভলী পরিবহনের। শাহবাগ থেকে সেই গাড়িতে উঠে দেখা গেল স্যানিটাইজার-মাস্ক কোনোটাই নেই। ওই গাড়িতে থাকা ২৪ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৬ জনের মুখে মাস্ক ছিল। ৩ জনের থুতনিতে ছিল মাস্ক।

ভাড়ার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কাগজে-কলমে গণপরিবহন আগের ভাড়ায় ফিরলেও করোনাকালের আগে যে কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় হতো এখনো তা চলছে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে বাড়ানো ৬০ ভাগ ভাড়া প্রত্যাহার হওয়ায় আপাতদৃষ্টিতে ভাড়া কিছুটা কমলেও অধিকাংশ বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। নগর পরিবহনের কাউন্টার সার্ভিস বাসে দূরবর্তী গন্তব্যের ভাড়া আদায় করে কৌশলে বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। আবার স্বল্প দূরত্বে ৩ টাকার ভাড়া ৫ টাকা বা ৮ টাকা আদায় পুরনো বিষয়। ফলে এটি অনেকটা যাত্রীদের জন্য গা সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

বিআরটিএর তালিকায় মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১২ টাকা। কিন্তু এখানেও ৩ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। রজনীগন্ধা বাসের যাত্রী কামরুল ইসলাম জানালেন, গুলিস্তান নয়, শাহবাগে নামলেও ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়। করোনাকালে ভাড়া বাড়ানোর পর ২৫ টাকা নেওয়া হতো।

মোহাম্মদপুর থেকে খিলগাঁও রুটের বাস মিডলাইন। এ বাসে জিগাতলা থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ২০ টাকা। অর্ধেক আসন খালি রাখার সময় ৩০ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। মোহাম্মদপুর থেকে খিলগাঁও তালতলার দূরত্ব ১৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৫ টাকা। ক’দিন আগে নেওয়া হতো ৫০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ভাড়া কমানোর নির্দেশনা সব মালিককে দেওয়া হয়েছে। বাসে কিছুতেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না। সবাইকে মাস্ক পরার শর্তও মানতে হবে। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট বাস মালিকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, গণপরিবহনে মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে সতর্ক করা হচ্ছে। তদারকি চলছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। ভাড়ার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী মাস্কের ব্যপারে আবারও সতর্ক করেছেন। আসছে শীত। তাই এ ব্যাপারে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, শুধু জরিমানা করে লোকজনকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা সম্ভব নয়, এ ক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়াসহ নানা মাধ্যমে প্রচার চালানো হলেও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না।

গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনায় ১১টি ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি কারা কারা নিশ্চিত করবে সেটিও বলে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বাজার ও মার্কেট কমিটি, পরিবহন মালিক সমিতিকে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নিশ্চিত করা হয়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877