সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কিশোর গ্যাংয়ের হোতা ছাত্রলীগের নেতা

কিশোর গ্যাংয়ের হোতা ছাত্রলীগের নেতা

স্বদেশ ডেস্ক:

শফিকুল হাসান ওরফে সানী (২১) ও শাকিল হোসেন ওরফে ড্যান্সার শাকিল (২৫)- আপন দুই ভাই। বড়ভাই ড্যান্সার শাকিল মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা। আর ছোটভাই শফিকুল হাসান ওরফে সানী স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা। তবে এই রাজনৈতিক মোড়কের আড়ালে তারা গড়ে তুলেছেন ভিন্ন দুনিয়া। সানী নেতৃত্ব দেন একটি কিলার গ্রুপের। এ ছাড়া সানী একটি কিশোরগ্যাংয়েরও রিং লিডার। এই দুই ভাইয়ের নামে রাজধানীর দুটি থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬টি মামলার সন্ধান মিলেছে। অথচ তারা এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় হত্যাকা-, মাদক ব্যবসা ও চাঁবাবাজির মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করেন এই দুই ভাই। এ জন্য সানী গড়ে তুলেছেন শতাধিক সদস্যের কিশোরগ্যাং।

তবে সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট রাতে উত্তরখান এলাকায় কলেজছাত্র মো. সোহাগকে হত্যা করে সানীর কিলার গ্রুপ। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে ছাত্রলীগ নেতা সানী ও ড্যান্সার শাকিল গাঢাকা দিয়েছেন। রাজধানীর দক্ষিণখানের গোয়ালটেকের চিশতিয়া মার্কেটের পাশেই এই দুই ভাইয়ের নিজস্ব বাড়ি। সেখানেই থাকেন তারা। বাড়িটির জায়গা নানার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। তবে বাড়িটি বানিয়েছেন দুই ভাই।

শফিকুল হাসান ওরফে সানী উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। স্থানীয়রা বলছেন, সানী সব সময় দামি মোটরসাইকেল অথবা গাড়ি নিয়ে চলতেন। তার সঙ্গে থাকত কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যদের মোটরসাইকেলবহর। তার কিশোরগ্যাং গ্রুপের নাম ‘সানী গ্রুপ’। কেউ কেউ এটিকে ‘রগকাটা গ্রুপ’ হিসেবেও চেনে। সব সময় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলেন সানী। উত্তরা ও আব্দুল্লাহপুরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করেন। তবে ভয়ে ভুক্তভোগীদের কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। তার কথার অবাধ্য হওয়ায় অন্তত তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। উত্তরার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে তাকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বড়ভাইয়ের মাদক ব্যবসারও সহযোগী ছোটভাই সানী। সানীর নামে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। চলতি বছরের ৩ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা হয় তার নামে। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট কলেজছাত্র সোহাগ হত্যাকা-ের ঘটনায় সানীর নামে মামলা হয় উত্তরা পূর্ব থানায়। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও খুনোখুনির ঘটনায় মামলা হলেও কখনো গ্রেপ্তার হননি সানী। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছেন এই ছাত্রলীগ নেতা। নিয়মিত পুলিশকে দেন মাসহারা। উত্তরা পূর্ব থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে সানীর গভীর সখ্য রয়েছে।

স্থানীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘নিয়মিত নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে গেলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি ছাত্রলীগ।’

সরেজমিন দেখা যায়, সানীর বড়ভাই ড্যান্সার শাকিল উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। আব্দুল্লাহপুর কোর্টবাড়ী ও উত্তরা পাবলিক কলেজের পাশের রেললাইন এলাকায় তার সিন্ডিকেটের শক্তিশালী মাদকের হাট। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় খুনোখুনিতেও জড়িয়েছেন ড্যান্সার শাকিল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দক্ষিণখান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে শাকিলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা দায়ের হয়। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন পরই আবার জামিনে বেরিয়ে আসেন ড্যান্সার শাকিল। জামিনে বেরিয়ে ফের পুরনো মাদক ব্যবসা শুরু করেন। ড্যান্সার শাকিলও ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তবে সংগঠনে তার কোনো পদ নেই। কারও কারও কাছে তিনিও ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত।

সানী ও ড্যান্সার শাকিল দুই ভাই পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আল আমিন প্রধানের আর্শিবাদে ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পান সানী- এমন অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগের স্থানীয় এক সূত্র। আল আমিন প্রধান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা তাদের (সানী ও তার ভাই) অব্যাহতি দিয়েছি। তাদের সব প্রোগ্রামে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।’ তবে তিনি সানীকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

তবে উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘সানীকে অব্যাহতি দিতে আমরা প্রস্তুত। তার বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংগঠন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। জেনে তার পর আপনাকে জানাতে পারব।’

গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর উত্তরখানের রাজাবাড়ীর খ্রিস্টানপাড়ায় রিকশার চাকা থেকে কাদা ছিটকে গায়ে পড়ায় এক রিকশাচালককে বকাঝকা ও মারধর করে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা। তা দেখে প্রতিবাদ করেন কলেজছাত্র মো. সোহাগ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোরগ্যাংয়ের দুর্বৃত্তদের একজন সোহাগের পেটে ছুরিকাঘাত করে। তাকে উদ্ধার করে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক সোহাগকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরদিন নিহতের বড়ভাই মেহেদী হাসান সাগর বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শফিকুল হাসান সানী (২১), মাহবুবুল ইসলাম রাসেল ওরফে কাটার রাসেল, হৃদয়, সাদ (২০) ও সাব্বির হোসেনের (২০) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

নিহত সোহাগ রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। করোনায় এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় টঙ্গীতে দুলাভাইয়ের শুঁটকির ব্যবসায় সহযোগিতা করছিলেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877