বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০১:১১ পূর্বাহ্ন

কেউ পাবে সুযোগ কেউ হবে বঞ্চিত

কেউ পাবে সুযোগ কেউ হবে বঞ্চিত

স্বদেশ ডেস্ক:

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে কেউ সুযোগ পেয়েছে আবার কেউ বঞ্চিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জটিলতার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তাদের পরামর্শ এ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে। মূল্যায়ন গাইডলাইন তৈরি করে সুপারিশের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কমিটি সুপারিশ করবে। এর ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যেই মূল্যায়ন শেষ করে ফল ঘোষণা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আমাদের সময়কে বলেন, যে কোনো ধরনের পরিবর্তনে নানা ধরনের বৈষম্য

তৈরি হবে। আবার এর বিকল্পই নেই। সিদ্ধান্ত যাই-ই হোক, দেখা যাবে কেউ সুযোগ পেয়েছে আবার কেউ বঞ্চিত হয়েছে। এটা জীবনের একটা অংশ।

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সবাই পাস; তবে গ্রেডিংয়ে তারতম্য থাকবে। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, অবশ্যই সবাই পাস করবে। তবে ফলটা কী হবে সেটা নির্ভর করছে তার জেএসসি ও এসএসসির পরীক্ষার ফলের ওপর।

এ প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, সরকারের যে সিদ্ধান্ত এসেছে- এটা মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা যাচ্ছে না। কবে খোলা হবে সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এ কারণে এমন সিদ্ধান্তে সরকারকে যেতে হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। আবার এই শিক্ষার্থীদের একটা স্কোরিং করেই পরবর্তী ধাপে যেতে দিতে হয়। সরকারকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর মূল্যায়নের চিন্তা করতে হচ্ছে। এখন আশঙ্কা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় এ নিয়ে জটিলতা তৈরির।

আমার পরামর্শ, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা আসবে। এগুলো জটিলভাবে না চিন্তা করে সহজতর পদ্ধতি তৈরি করে শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিশেষ করে অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা এসএসসিতে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ে, এইচএসসিতে গিয়ে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এ ধরনের শিক্ষার্থীর ফল তৈরির জন্য খুব সতর্ক থাকতে হবে। পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকার যে টেকনিক্যাল কমিটি করেছে তাদের অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিষয়টি জটিল হলেও সমাধানযোগ্য।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আরও বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছর লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর ক্ষতি বাড়ানো যাবে না। দ্রুত সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হবে? কোন পদ্ধতিতে তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে? এসব বিষয়ে এখন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, যাতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় গিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি না হয়।

করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প মূল্যায়নে যেতে হচ্ছে সরকারকে। উচ্চ মাধ্যমিকের পরই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ায় যায়। ভবিষ্যতে তারা কীভাবে কোন পেশায় যেতে পারবে, এ পর্যায়েই তা অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়ে যায়। ফলে এইচএসসির ফল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিকল্প মূল্যায়ন সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক আমাদের সময়কে বলেন, পরীক্ষাটা নিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের একক সমস্যা নয়। পুরো বিশ্বের লেখাপড়াসহ সব খাতে কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। একেক দেশ একেকভাবে সেটা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশেও সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে হয়তো সরকার বিচার-বিবেচনা করেই পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি কবে-কখন স্বাভাবিক হবে কেউ নিশ্চিত বলতে পারছি না। এর মধ্যেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, মেধার বিচার তো শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে হয়, তা নয়। বাংলাদেশে যে পরীক্ষা পদ্ধতি আছে, তাতেও সমস্যা আছে। এখন লেখাপড়ায় ছাত্রদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় জিপিএ-৫ কে পাবে। অথচ শিক্ষা মানে হচ্ছে ছাত্রদের মনে অনুসন্ধিৎসু ও কৌতূহলী এবং জিজ্ঞাসুবোধ তৈরি করা। আমরা তো পরীক্ষানির্ভর লেখাপড়া শেখাচ্ছি। এখানে কতটুকু মেধার পরীক্ষা হয়।

প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, পরীক্ষা না নেওয়ার বিশেষ বিবেচনার জন্য এসব শিক্ষার্থীকে চাকরিজীবনে বৈষম্য পড়ারও সুযোগ নেই। কোনো শিক্ষার্থী বা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। পুরো সেশনের শিক্ষার্থীদের একই অবস্থা। আর এই সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির মূল্যায়ন হবে না। চাকরির সময় তার মেধা, দক্ষতা আর নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়ে সুপারিশের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে। আর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন করে প্রতিনিধি ছাড়াও কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের রাখা হয়েছে।

গত ১ এপ্রিল থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877