স্বদেশ ডেস্ক:
অল্প সময়ের ব্যবধানে শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হেদায়েতুল আলম গতকাল মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজিরা দিয়েছেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনায় উপস্থিত হন। ঘণ্টাখানেক সেখানে তাকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অবৈধ সম্পদের হিসাব চেয়ে হেদায়েতুল আলমকে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান ২ সেপ্টেম্বর নোটিশ পাঠান। সেখানে তাকে ৮ সেপ্টেম্বর (গতকাল) সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনায় হাজির হতে বলা হয়েছিল।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনার এক কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলমের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে সম্প্রতি টিভি, পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হয়েছে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে দুদক ঢাকা প্রধান কার্যালয় চেয়ারম্যানের সম্পদের হিসাব অনুসন্ধানে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেছে। সেই মোতাবেক চেয়ারম্যানকে তলব করা হয়।
চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম সোমবার দুপুরে জানান, তিনি কোনো অবৈধ সম্পদ অর্জন করেননি। গাড়ি-বাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ তার যা সম্পদ আছে, সবই বৈধ। সব কিছুর আয়কর ও ভ্যাট দেওয়া আছে। তিনি আরও বলেন, শুধু অভিযোগ দিলে তো হবে না, সেটার সত্যতাও থাকতে হবে। দুদক আমার সম্পদের হিসাব চেয়েছে, আমিও হিসাব দেব, সব রেডি আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের চড়িয়াশিকা গ্রামের মোকছেদ আলীর মধ্যবিত্ত পরিবারে হেদায়েতুল আলমের জন্ম। টানা ৭ বছর সলঙ্গা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১১ সালে তিনি প্রথম হাটিকুমরুল ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে ২০২৬ সালে আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে তার বিলাসবহুল বাড়ি, সুপার মার্কেট ও উন্নতমানের গাড়ি রয়েছে। নিজের পাল্লা ভারী করতে জামায়াত-বিএনপি থেকে লোকজনকে নিজ দলে ভেড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত জানান, চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম চড়িয়াশিকায় ৩ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেছেন দোতলা বিলাসবহুল বাড়ি, যার প্রতিটি রুম এসি করা, প্রতিটি রুমে রয়েছে দেড় লাখ টাকা মূল্যের একেকটি টিভি মনিটর, প্রতিটি জানালার পর্দার দাম ৮০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় তলার ৬টি রুমে হাতিলের তৈরি প্রায় ৯০ লাখ টাকার নামিদামি ফার্নিচার রয়েছে, সঙ্গে আছে দামি কমোড ও বেসিন।
এ ছাড়া হাটিকুমরুল গোলচত্বরের উত্তর পাশে ১৬ শতক জমিতে চেয়ারম্যান নির্মাণ করছেন পাঁচতলা ভবন। নিজের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারের দাম ৪৮ লাখ টাকা। স্ত্রীর রয়েছে প্রায় ২০০ ভরি ওজনের সোনার গহনা। এ ছাড়া ব্যস্ততম সিরাজগঞ্জ রোড গোলচত্বরের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে রয়েছে।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান নিজের অবস্থান শক্ত করতে গত ৮-১০ বছরে প্রায় ১৪ জনকে জামায়াত-বিএনপি থেকে এনে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পদে বসিয়েছেন। তার নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় আমিসহ অন্তত ১৫ নেতাকর্মী মারপিট ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।