বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

মা-মেয়েকে রশ্মিতে বেঁধে নির্যাতন: অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রেফতারের দাবি বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির

মা-মেয়েকে রশ্মিতে বেঁধে নির্যাতন: অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রেফতারের দাবি বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির

স্বদেশ রিপোর্ট: গতকাল রাত থেকেই মা-মেয়ের রশি বাঁধা ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার এমন বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের সীমান্ত চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায়। স্থানীয়দের ভাষ্য, পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক ব্যক্তির গরু চুরির ঘটনায় এই দুজনসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের কাছে। সেখানে চলে আরেক দফা নির্যাতন। পরে পুলিশ ডেকে মুমূর্ষু দুই নারীকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ মা-মেয়েকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে প্রতিবাদ নিন্দার ঝড় উঠেছে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ এসে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর শনিবার রাতে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।
ওই দুই নারীকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুস্কৃতকারীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তিনদিন আগে ঘটনা ঘটলেও চেয়ারম্যান ও তার লাঠিয়ালদের ভয়ে কেউ মূখ খোলেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর এটি জানাজানি হয় সর্বত্র।
চকরিয়া থানার হারবাং তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার স্থানীয়রা ফাঁড়িতে খবর দিলে আমরা ফোর্স পাঠাই। আমাদের ফোর্স গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় মা মেয়েকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসি। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় এক ব্যক্তির দায়ের করা গরু চুরির মামলায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে মা-মেয়েসহ চার জনের বাড়ি পটিয়ার শান্তির হাটে। অপরজনের বাড়ি চকরিয়া লালব্রিজ এলাকায়।
হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের উপর নির্যাতন হয়েছে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ ওদের কেউ করেনি। আমাদের ফোর্স যখন ঘটনাস্থলে যায়, তখন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসাটাই প্রাধান্য দিয়েছি। আর ভুক্তভোগী কিংবা অন্য কেউ যদি অভিযোগ করে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই দুই নারীকে শ্লীলতা হানি করে মাথার ওড়না পর্যন্ত ছিড়ে ফেলে দিয়েছে দুস্কৃতকারীরা। একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চলার পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম চৌকিদার আমিনকে পাঠিয়ে তাদেরকে রশিতে বেঁধে তার কার্যালয়ে এনে আবার নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছেন। উপর্যুপরি নির্যাতন শেষে মা-মেয়ের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন বুঝতে পেরে চেয়ারম্যানের লোকজন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ফোন করে পুলিশ এনে তাদের হাতে মা-মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় তুলে দেয়। হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
এটি কেমন বিচার চেয়ারম্যানের? আমরা এর বিচার চাই। মা- মেয়েকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে জনতার সামনে রশি দিয়ে বেঁধে পেটানোর পর চকরিয়া হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তার কার্যালয়ে নিয়েও আবারও পেটায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা কেমন বিচার? ওই দুই মহিলা চেয়ারম্যানের এলাকার বাসিন্দাও নন। চট্টগ্রামের পটিয়ার দুই ভদ্র নারীকে এভাবে নির্যাতন করে বিচার করার অধিকার চেয়ারম্যান কিভাবে পেল? পুরুষ নয়-মহিলা অর্থাৎ মা মেয়ে এক জেলা থেকে ভিন্ন জেলায় গিয়ে গরু চুরি করতে পারে কি? চুরির অভিযোগে অতীতেও আমাদের দেশে হাজারো কলঙ্কের কালিমা লেপটে দিয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। গরু চুরির অভিযোগে এবার মা মেয়ে দুজনকে বেধড়ক মারধর তারপর স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে সেখানে আরও একদফা নিপিড়ন চালানো হয়। এটি প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন ।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি’র চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, মহাসচিব এ্যাড. সাইফুল ইসলাম সেকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন মোঃ আল আমিন। রবিবার রাতে মারুফ সরকারের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। বক্তারা বলেন ,আমরা এঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এমন নেক্কারজনক ঘটনা কেউ পারে? আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি চেয়ারম্যানসহ সকল আসামি গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আমরা জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কঠোর আন্দোলন করবো। তাই আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি খুব তাড়াতাড়ি আপনারা আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করুন, অন্যথায় আগামী ২৪ঘন্টা পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আই.জি.পি’, কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877