বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০১:৪৩ অপরাহ্ন

করোনায় মারা গেলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আজিজুর

করোনায় মারা গেলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আজিজুর

স্বদেশ ডেস্ক:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) তার মৃত্যু হয়।

আজ মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মীর নাহিদ আহসান। তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট করোনা নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে আজিজুর রহমানের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার গুজারাই গ্রামে ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আজিজুর রহমান। তার বাবা আব্দুল সত্তার, মা কাঞ্চন বিবি। শ্রীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন আজিজুর। পরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে হবিগঞ্জের বিখ্যাত বৃন্দাবন কলেজ হতে বি.কম ডিগ্রী অর্জন করেন।

ছাত্রজীবন হতেই সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়ান আজিজুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কারাবরণ করেন তিনি। একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙে সিলেট কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করা হয়। ২ মে পুনরায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করে বর্বরোচিত দমন পীড়ন চালানোর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন আজিজুর রহমান।

মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত পশ্চিমবঙ্গের বাগডুগায় (দার্জিলিং) প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। প্রবাসী সরকার কর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন আজিজুর রহমান।

গণপরিষদের এই সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুবার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

অকৃতদার এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ (বর্তমানে সরকারি) ও সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠক। সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মৌলভীবাজার শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনমূলে মৌলভীবাজারে প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সরাসরি বঙ্গবন্ধু প্রভাবিত, অহিংস ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877