স্বদেশ ডেস্ক: দেশের ১১২ উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় এনেছে সরকার। ফলে নতুন করে আরও সাড়ে ৮ লাখ সুবিধাভোগী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যুক্ত হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে শতভাগ ভাতাভোগীর বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও পরে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলাসহ বিশেষ বিবেচনায় আরও ১২টি উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিসিএস) কর্তৃক প্রকাশিত ‘পোভার্টি ম্যাপস অব বাংলাদেশ-২০১০’ (দারিদ্র্যের মানচিত্র) অনুযায়ী সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি এবং বিশেষ বিবেচনায় ১২ উপজেলায় বয়স্ক এবং বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা দিতে সম্মতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সুবিধাভোগীরা চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ভাতা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
গত ২৪ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাজমা মোবারেকের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, ভাতা কার্যক্রমের কভারেজ বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য শতভাগ বয়স্ক মানুষ এবং শতভাগ বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা নারীদের প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ এবং বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ বেড়েছে। এ খাতে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রস্তাবিত বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলেও ওই চিঠিতে জানানো হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, এই ভাতা জিটুপি বা গর্ভমেন্ট টু পারসন পদ্ধতিতে পরিশোধের লক্ষ্যে শুরু থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।
শতভাগ ভাতা প্রদানের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি বলেন, বয়স্কভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা কর্মসূচির আওতা দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করবে সরকার। করোনা ভাইরাসের কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি। বিসিএসের দারিদ্র্যের মানচিত্র অনুযায়ী নির্বাচিত ১১২ উপজেলার শতভাগ বয়স্ক মানুষ, শতভাগ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) মো. সাব্বির ইমাম বলেন, শতভাগ ভাতার আওতায় আসা ১১২ উপজেলার সুবিধাভোগীরা চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকেই ভাতা পাচ্ছেন।
সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলা
বাগেরহাটের চিতলমারী, শরণখোলা, বান্দরবানের থানচি, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল সদর, ভোলা সদর, চাঁদপুরের হাইমচর, কচুয়া, হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ, ফেনীর সোনাগাজী, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সাদুল্যাপুর, সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, পলাশবাড়ী, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, জামালপুর সদর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী। ঝালকাঠির নলছিটি, রাজাপুর, খুলনার তেরখাদা, কয়রা। কুড়িগ্রামের চর রাজিরপুর, রাজারহাট, উলিপুর, নাগেশ^রী, ভুরুঙ্গামারী, চিলমারী, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী। লক্ষ¥ীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর। মাগুরার মোহাম্মদপুর, মৌলভীবাজারের জুড়ি, ময়মনসিংহের নান্দাইল, ময়মনসিংহ সদর, ফুলপুর, ধোবাউড়া, ঈশ^রগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, হালুয়াঘাট, গৌরীপুর, ত্রিশাল। পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর, জিয়ানগর, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি), ভা-ারিয়া, পিরোজপুর সদর। বাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, পাংশা, গোদাগাড়ী। রংপুরের গাংগাচড়া, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ। সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ, তালা, কলারোয়া এবং দেবহাটা উপজেলা। শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, শরীয়তপুর সদর, নড়িয়া ও ডামুড্যা উপজেলা। শেরপুরের শেরপুর সদর, শ্রীবর্দী ও নকলা উপজেলা। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা। সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর এবং কোম্পানীগঞ্জ সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলা হিসেবে শতভাগ ভাতার আওতায় এসেছে।
বিশেষ বিবেচনায় নির্বাচিত ১২ উপজেলা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া; কুমিল্লার লালমাই, সদর দক্ষিণ ও লাঙ্গলকোট; লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম; নেত্রকোনার সদর ও বারহাট্টা; টাঙ্গাইলের নাগরপুর; সিরাজগঞ্জের কাজিপুর এবং পাবনার বেড়া।