স্বদেশ ডেস্ক:
প্রায় ২২ বছর পর বাড়ি ফিরছেন আবু সাঈদ (৪৯)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামী ছিলেন তিনি। সরকারের বিশেষ ক্ষমায় মুক্তি পান তিনি। আবু সাঈদ বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোস্তাপুর এলাকার গয়ের আলীর ছেলে। সরকারের বিশেষ ক্ষমায় এবার ৩২৯ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মুক্তি পেয়েছেন। বগুড়া থেকে শুধু মাত্র ক্ষমা পেয়েছেন আবু সাঈদ।
বগুড়া জেলা কারাগার সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে নওগাঁ জেলার বদলগাছির ঢেকড়া এলাকায় ঘটে যাওয়া হত্যা মামলা আসামী তিনি। ঘটনার ১৫ দিন পর গ্রেফতার হন আবু সাঈদ। এ মামলায় সে সময় আরও ৩ জন গ্রেপ্তার হয়। তারপর ২০০৩ সালের ২৩ নভেম্বর নওগাঁ জেলা দায়রা জজ আদালতে রায় হয় মামলার। রায়ে ১ জনের ফাঁসি, ২জনের যাবজ্জীবন সাজা হয় ও ১ জন খালাস পায়।
হত্যার মামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আবু সাঈদ বগুড়া জেলখানায় রয়েছেন প্রায় ২২ বছর ধরে। আবু সাঈদ ২৭বছর বয়সে বগুড়া জেলা কারাগারে আসেন। এখন তার বয়স ৪৯ বছর। আবু সাঈদ যখন জেলখানায় আসেন তখন তার ছোট ১ ছেলে ও ১ মেয়ে ছিল। এখন তারা বিয়ে শাদী করে সংসারে মনোযোগ দিয়েছে।
মুক্তি পেয়ে আবু সাঈদ অনেক আনন্দিত। বগুড়া জেল গেটে তার সঙ্গে কথা হয়। আবু সাঈদ বলেন, ‘মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেলাম। জানিনা কোনো ভাল কাজের জন্য সরকার আমাকে মুক্তি দিল। প্রায় ২২ বছর ধরে চার দেয়ালের মাঝে বন্দি। ভেবেছিলাম জীবনটা হয়ত চার দেয়ালের মাঝেই শেষ হয়ে যাবে। মৃত্যুর আগে হয়ত আর পরিবারের কাছে ফিরতে পারব না। জেলখানার চার দেয়াল হয়েছিল জীবনের সঙ্গী। জেলখানায় কত জনকে আসতে আর যেতে দেখেছি তার হিসেব নেই। অনেকের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠেছে।
তিনি আরও জানান, সরকারের বিশেষ ক্ষমায় গতকাল রোববার বিকেল ৫টায় মুক্তি পেয়ে আবার বাড়ি ফিরতে পারছি। প্রায় ২২ বছর পর আবার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা হবে। আবার পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারব। জীবনের বাকিটা সময় স্বাভাবিক ও সুস্থ ভাবে জীবনযাপন করতে চাই।
আবু সাঈদকে নিতে তার ছোট বোন দুলালী ও দুলালীর ছোট ছেলেও এসেছেন। ভাইকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দুলালী। দুলালী বলেন, ‘আমার ছোট বেলার সকল আবদার পুরণ করতেন ভাই। ছোট বেলায় আমাতে তুলে খাওয়াতো। হঠাৎ করেই ভাই নেই। পরে জানতে পারি হত্যা মামলায় ভাই জেলখানায় বন্দি। সেই থেকে ভাইকে আর কাছে পায়নি। আজ ভাইকে কাছে পেয়েছি। আমার ভাই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে। সকলের কাছে আমি দোয়া চাই আমার ভাইয়ের জন্য।’
বগুড়া কারাগারের জেলার শরিফুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের বিশেষ ক্ষমায় এবার সারাদেশে সাজাপ্রাপ্ত ৩২৯ জনকে বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। বগুড়া জেলখানা থেকে শুধু মাত্র ১ জন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পাওয়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আবু সাঈদ (৪৯)।
বগুড়া জেলখানায় প্রায় ২২ বছর ধরে আছেন। তার কাজ কর্ম খুব ভাল। তার প্রতি যে সব কাজ দেয়া থাকে তা সে নিজের দায়িত্ব মনে করে সম্পন্ন করতেন। আবু সাঈদ এতদিন ধরে জেলখানায় রয়েছে তার নামে কোনো প্রকার ঝামেলার কথা শোনা যায়নি।
১৯৯৯ সালে নওগাঁর একটি হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে রায়ে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। তারপর থেকে এই জেলখানায় রয়েছে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে আবু সাঈদ। আবার নতুন করে সে তার জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হবে পরিবার পরিজনের সঙ্গে।