স্বদেশ ডেস্ক: কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছিল। ক্লাস না থাকায় বিদ্যালয়ের মাঠে খেলছিল কেউ কেউ। এরই মধ্যে হঠাৎই কিছু শিক্ষার্থী ভয়ার্ত চিৎকার, ‘সাপ! সাপ! সাপ!’ শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ভয় পেয়েছিল সাপটিও। সে উঠে পড়ে বিদ্যালয় আঙিনার একটি গাছে। খবর পেয়ে সাপটি ধরে নিয়ে যান বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের লোকজন।
গতকাল বুধবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের উদয়ন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এটি বিলুপ্তপ্রায় সবুজ বোড়া প্রজাতির সাপ বলে জানিয়েছে সেবা ফাউন্ডেশন।
উদয়ন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবিতা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল চলাকালীন হঠাৎই সাপটি বিদ্যালয়ের ফটকের ভেতরে এসে পড়ে। ওই এলাকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে যায়। তারা চেঁচামেচি-লাফালাফি শুরু করে। সাপটিও ভয় পেয়ে যায়। বিদ্যালয় ফটক লাগোয়া একটি গাছে উঠে বসে। পরে আমরা বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে খবর দিই।’
বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কার্যালয় শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরেই। কোথাও কোনো প্রাণীর উদ্ধার বা বিপদে পড়ার খবর পেলেই ফাউন্ডেশনের লোকজন ছুটে যান। প্রাণীটিকে সেবা–শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ হলে পরে অবমুক্ত করা হয়। উদয়ন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সাপ দেখতে পাওয়ার খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান ফাউন্ডেশনের লোকজন। তাঁরা সবুজ বোড়া সাপটিকে গাছ থেকে নামিয়ে আনেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে সাপটির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এই প্রজাতির সাপ প্রথম দেখল। পরে সাপটি সেবা ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেবা ফাউন্ডেশনে পরিচালক সঞ্জিত দেব বলেন, উদ্ধার হওয়া সাপটি ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত। ইংরেজি নাম ‘হোয়াইট লিপড পিট ভাইপার’। এটি বিষাক্ত সাপ। এরা দু-তিনটি প্রজাতির হয়ে থাকে। তবে সব প্রজাতিই দেখতে সবুজ ও প্রায় একই রকম। এই সাপের মাথা চ্যাপ্টা, আকারে বড় ও দেখতে ত্রিকোণের মতো। এরা দুই ফুটের বেশি লম্বা হয়। সবুজের সঙ্গে সব সময় মিশে থাকে। সাধারণত চা–বাগানেই এই সাপ বেশি দেখা যায়। সিলেট বিভাগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বনাঞ্চলে সবুজ বোড়া সাপের বিচরণ বেশি। তবে সুন্দরবনেও এ সাপটির দেখা পাওয়া যায়। বর্তমানে সাপটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে।
সবুজ বোড়া খুব আস্তে আস্তে চলাফেরা করে। সাধারণত এরা লুকিয়ে বসে থাকে। শিকার কাছে এলেই ছোবল দিয়ে ধরে খায়। এদের খাদ্যতালিকায় আছে ব্যাঙ, পাখি, ইঁদুর। উদ্ধার হওয়া সাপটি শিগগিরই অবমুক্ত করা হবে বলে জানান সঞ্জিত দেব।