শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন

ব্রাজিলে যেভাবে দ্রুত ছড়াল করোনার সংক্রমণ

ব্রাজিলে যেভাবে দ্রুত ছড়াল করোনার সংক্রমণ

স্বদেশ ডেস্ক:

বিশ্বের যেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সবচেয়ে প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে, ব্রাজিল তাদের মধ্যে একটি। মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিলে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ১২ হাজার ১৫১ জন।

সংক্রমণের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রাজিলই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আর করোনা পরীক্ষা নিয়ে সন্দেহ থাকায় মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারি ব্রাজিলের মূল ভূ-খণ্ডে আঘাত করতে বেশ সময় নিয়েছে। প্রথম ধাপে আমাজোনাস অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণে। ভাইরাসের প্রকোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাজন জঙ্গলের আশেপাশে থাকা নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর মানুষ। তাদের অধিকাংশের বাড়ি থেকেই হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বহুদূরে অবস্থিত।

এরপর যখন সাও পাওলো আর রিও ডি জানেইরোর মতো বড় শহরগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তখন ব্রাজিলে সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া শুরু করে। মে মাসে সাও পাওলোর মেয়র সতর্ক করেন যে, তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে যাচ্ছে এবং শহরটি করোনাভাইরাসের নতুন হটস্পট হয়ে উঠছে। সেসময় হাসপাতালের বেডের চাহিদা হয়ে ওঠে আকাশছোঁয়া।

তবে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও দেশব্যাপী লকডাউন জারি করা হয়নি। বিভিন্ন রাজ্য এবং শহর তাদের নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন মাত্রার লকডাউন আরোপ করে।

সেসময় ঘরে থাকার আদেশ জারি করার সমালোচনা করে ব্রাজিলের মানুষ, সমালোচনা করেন ব্রাজিলের কট্টর দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারোও। রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগও দেন তিনি।

মহামারি সম্পর্কে বোলসোনারোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে। করোনাভাইরাসের ঝুঁকিকে তাচ্ছিল্য করে বারবার এই রোগকে তিনি ‘ছোট ফ্লু’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বারবার মন্তব্য করেছেন যে ভাইরাসের চেয়ে আঞ্চলিক লকডাউন অর্থনীতির বেশি ক্ষতি করছে। ভীতি এবং আতঙ্ক ছড়ানোর দায়ে তিনি বারবার মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন।

লকডাউন দিলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে-প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর এই ধারণার অনেক সমর্থক থাকলেও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কিন্তু এই মনোভাবের সমালোচনা করেছে সবসময়ই। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে গেছেন দুজন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে একজন চাকরিচ্যুত হন, আর আরেকজন নিজেই পদত্যাগ করেন।

প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো এমনও বলেছিলেন যে, তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না। মার্চ মাসে এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ছোট এই ফ্লুতে ঘায়েল হবো না।’ তবে মাসখানেক পরেই তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হন।

প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেরদিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টড চ্যাপম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

গত ২০ জুন বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ১০ লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় ব্রাজিলে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হলে এই সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হতে পারে।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও রিও ডি জানেইরো ও সাও পাওলোতে খুলে দেওয়া হয় রেস্টুরেন্ট ও পানশালা।

তবে আশার কথ হলো, হাজার হাজার ব্রাজিলিয়ান স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় দুটি ব্রাজিলিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল ভ্যাক্সিন তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877