রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন

কিটের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস পরীক্ষা

কিটের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস পরীক্ষা

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে সরকার পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানোর অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে গেলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন কিট সরবরাহের অভাবে এ প্রচেষ্টা বাঁধার মুখে পড়ছে।

তারা বলেছেন, আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেলেও দৈনিক নমুনা সংগ্রহ এবং করোনার পরীক্ষা সংখ্যা এখনও অপর্যাপ্ত। সেইসাথে দক্ষ ও প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

কিট এবং জনবল সংকটের কারণে কয়েকটি ল্যাব ও পরীক্ষাগার করোনাভাইরাস পরীক্ষা বন্ধ ও সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে কোভিড-১৯ পরীক্ষায়।

পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬৭ করা হলেও শুক্রবার সারাদেশে মাত্র ১৫,১৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদিন ৯টি ল্যাবে কোনো ধরনের নমুনার পরীক্ষা করা হয়নি।

তবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) দাবি করছে তাদের কাছে পর্যাপ্ত কিটে আছে এবং তারা কিট আমদানির জটিলতা কমিয়ে এর মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অর্থাভাবের জন্য গত ১০ দিন ধরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় না দেয়ায় আমদানিকারকদের বিল পরিশোধে বেগ পেতে হচ্ছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ওষুধাগারকে (সিএমএসডি)।

এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধাপে কিট সরবরাহ করলেও সিএমএসডি তাদের কোনও অর্থ সরবরাহ করতে পারেনি। ফলে, অর্থাভাবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান কিট আমদানি এবং নতুন ক্রয়াদেশ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে প্রায় ৮ লাখ টেস্টিং কিট আমদানি করা হয়েছে। তবে কিটের মজুদ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে, কয়েকটি ল্যাবে কিটের সরবরাহ স্থগিত করা হয়েছে এবং ল্যাবগুলোকে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে দিতে বলা হয়েছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, জুলাই মাসে সমস্যাটি সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি মানসম্মত কর্মপদ্ধতি তৈরি করতে ও কিটের মজুদ বাড়ানোর জন্য কাজ কর যাচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা জানান, কিটের কোনও অভাব নেই এবং পরীক্ষাগারগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কিট সরবরাহ করা হচ্ছে।

শুক্রবার দেশের ৯টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা বন্ধ থাকার পেছনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিট সরবরাহের অভাবে নয় বরং অন্য কারণে এগুলো বন্ধ ছিলো।

কিট সংগ্রহের তহবিল সংকটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আরও কিট আমদানি এবং এর মজুদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের শেষে কিট আমদানি নিয়ে থাকা সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে এবং আগামী মাসে পর্যাপ্ত কিট মজুদ করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশেও কিটের অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা চীন থেকে আমদানি করা স্যানসুর বায়োটেকের পরীক্ষার কিটটি প্রথম থেকেই ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু সরবরাহ চেইনে সমস্যার কারণে কিটের মজুদ হ্রাস পাচ্ছে। এখন অনেক পরীক্ষাগারে ইউরোপীয় কিট দেয়া হচ্ছে।তবে ঢামেকে-এ আমরা এখনও স্যানসুর কিট ব্যবহার করছি।’

ডা. সুলতানা বলেন, স্যানসুর কিটগুলো করোনভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য খুব সহজ এবং কম সময়সাপেক্ষ এবং চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদরা কিটটি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। ‘স্যানসুরের চেয়ে ইউরোপীয় কিটগুলোর সাথে পরীক্ষা চালাতে অনেক সময় লাগে। সুতরাং, পরীক্ষার হার কমে যাওয়ার কথা তখন, যখন ইউরোপীয় কিটগুলো পরীক্ষাগারগুলোতে দেয়া হবে।

সরকার পরীক্ষার হার বাড়াতে চেষ্টো করছে জানিয়ে এ ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘এজন্য পর্যাপ্ত কিট স্টক নিশ্চিত করা উচিত। পরীক্ষা বাধাহীন রাখতে আমাদের কিট আমদানির উৎসে বৈচিত্র্য আনতে হবে।’

অধ্যাপক শাহানা বলেন, ‘করোনভাইরাস পরীক্ষার জন্য মনোনীত গবেষণাগারগুলো পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনশক্তি এবং প্রাসঙ্গিক সামগ্রি সরবরাহে অভাবের কারণে নমুনা সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে পরীক্ষা করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রোগীদের চাপ মোকাবেলা করার জন্য প্রতিদিন পরীক্ষার চেয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে চাই। কিন্তু, প্রথমত আমাদের কাছে এই নমুনাগুলো সহজেই সংগ্রহ করার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই। দ্বিতীয়ত, আমাদের সংগ্রহ করা নমুনাগুলি মাইনাস ৮০ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। কিন্তু নমুনাগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য আমাদের কাছে এমন পরিশীলিত রেফ্রিজারেটর নেই।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লুএইচও) সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অব্যবস্থাপনা এবং দুর্বল পরিকল্পনার কারণে কিটের সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রজেকশনের ভিত্তিতে কিটের মজুদ নিশ্চিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত। আগামী মাসে তারা কতটি পরীক্ষা নেবে সে সম্পর্কে তাদের অবশ্যই একটি পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনা অনুসারে, তাদের কিট সংগ্রহ করতে হবে এবং সেগুলো মজুদ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুজাহেরুল হক বলেন, ‘কিট আমদানির জন্য কোনো নির্দিষ্ট দেশের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। কিট সংগ্রহের জন্য আমাদের একাধিক উৎস থাকা উচিত। চীন ছাড়াও, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কোরিয়া কিট আমদানির জন্য ভাল উৎস হতে পারে।’

মুজাহেরুল হক বলেন, ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকারের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সকল জেলায় করোনার পরীক্ষার সুযোগ বাড়ানো উচিত। ‘দেশের আসল করোনার পরিস্থিতি জানতে অ্যান্টিবডি টেস্টও চালু করা উচিত।’ ইউএনবি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877