রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
এক মাসে ৪৯ লাশ দাফন ও সৎকার করলেন কাউন্সিলর খোরশেদ

এক মাসে ৪৯ লাশ দাফন ও সৎকার করলেন কাউন্সিলর খোরশেদ

নারায়ণগঞ্জে এক মাসে ৪৯টি লাশের দাফন ও সৎকার করছেন সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তাদের কেউ মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে, কেউ আবার করোনা উপসর্গ নিয়ে। তাদের কেউই কাউন্সিলর খোরশেদের স্বজন নন। কিংবা তিনিও তাদের কেউ নন। অথচ ৪৯ লাশের ভার নিলেন তিনি। মুসলিমদের দিলেন নামাজে জানাজা, হিন্দুদের করলেন সৎকার।

করোনার এই দুর্যোগে নিহতের স্বজনদের কেউ এগিয়ে আসেননি। বরং মুখ লুকিয়েছে। বাবার লাশ ঘরের একরুমে আবদ্ধ রেখে খবর দিলেন কাউন্সিলরকে। প্রাণের ভয়ে স্বজনরা যেখানে এগিয়ে আসেননি। সেখানে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে এগিয়ে এসেছেন এ জনপ্রতিনিধি। তার আরেকটা পরিচয় আছে, তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি।

কাউন্সিলর খোরশেদের মহানুভবতায় মুগ্ধ নারায়ণগঞ্জের মানুষ। এ ক্রান্তিকালে তার জীবনবাজি রাখা সামাজিক কর্মকাণ্ডের খবর দেশে-বিদেশের মিডিয়ায় আলোচিত। নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাকে উপাধি দিয়েছে ‘করোনা হিরো’। যেখানে বিপদ সেখানেই খোরশেদ। যেখানে লাশ সেখানেই তাকে দেয়া হয় খবর। কোনো কিছু চিন্তা না করে ছুটে যান তিনি। এ জন্য তিনি তৈরি করেছেন স্বেচ্ছাসেবী দল। তারা বিনামূল্যে দিচ্ছে মানুষের সেবা। গত ৮ এপ্রিল করোনা সাসপেক্ট আফতাব উদ্দিনের লাশের দাফন থেকে শুরু করে গতকাল বুধবার আমলাপাড়া এলাকার মৃত শাহীনের দাফনের মাধ্যমে ৪৯ লাশের দাফন ও সৎকার করেন খোরশেদ টিম।

নয়া দিগন্তকে খোরশেদ জানান, ২০ মে পর্যন্ত আমরা ৪৯ জনকে দাফন ও সৎকার করেছি। সম্ভবত করোনার নতুন রূপের শিকার হলেন আমলাপাড়া নিবাসী মো: শাহিন। তিনি গত চার দিন জ্বরে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ১২টার দিকে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং অজ্ঞান হয়ে যান। পরিবারের লোকজন তাকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান তিনি হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা গেছেন। পরিবারের আহ্বানে বুধবার সকাল ৯টায় আমরা শাহিন ভাইয়ের গোসল নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেছি। গোসল করান আমাদের সহযোদ্ধা হাফেজ শিব্বির আহমেদ, নামাজে জানাজা পড়ান কবরস্থান মসজিদের ইমাম মাওলানা বদর শাহ। টিমে ছিলেন হিরা, হাফেজ শিব্বির, আনোয়ার, সুমন, রাফি, লিটন মিয়া।

জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে দু’জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার দিন থেকেই টিম খোরশেদ প্রত্যক্ষভাবে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করে। ৯ মার্চ ২০ হাজার লিফলেট ও মাস্ক নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে বিতরণ শুরু করেন ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। টিম লিডার খোরশেদ জুমার নামাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বক্তব্য রাখেন। সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলাকালীন ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু ঘটে।

ফলে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও করোনাভীতি ছড়িয়ে পড়লে বাজারে স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ায় এক দিনেই সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় টিম খোরশেদ ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী স্যানিটাইজার বানানো শুরু করে। ২৮ মার্চ ৫০ এমএলের ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার বোতল ২৫০ এলএলের লিকুইড হ্যান্ড ওয়াস সোপ তৈরি ও বিতরণ করে।

এ সময় প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি টিম খোরশেদের কাছ থেকে ফর্মুলা নিয়ে সারা জেলায় কমপক্ষে ৩ লাখ স্যানিটাইজার তৈরি করে বিতরণ করে। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে লাশের দাফন ও সৎকার নিয়ে অমানবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশীরা, এমনকি পরিবারের লোকজনও যখন লাশ সৎকার ও দাফনে অনীহা জানাতে শুরু করে তখন ৩০ মার্চ টিম খোরশেদ নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, নাসিক মেয়র ও সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করে তারা করোনায় মারা যাওয়াদের লাশ গোসল, জানাজা, দাফন ও সৎকার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে। ৭ এপ্রিল টিম খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব স্থাপনের আবেদন জানান।

৮ এপ্রিল প্রথম করোনা সাসপেক্ট আফতাবউদ্দিনের দাফনের মাধ্যমে শুরু করে ২০ মে পর্যন্ত ৪৯ জনকে দাফন ও সৎকার করেছেন। এর মধ্যে ১৬ জন কোভিড পজেটিভ, ১৯ জন সাসপেক্ট ও ৭ জন ছিল স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণকারীর লাশ দাফন ও সৎকার করে। গত ১৪ মে থেকে টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভের যৌথ উদ্যোগে করোনার শুরুতে চালু হওয়া ‘টিম খোরশেদ টেলি মেডিসিন’ সেবার একমাস পূর্ণ হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ৫ জন মানবিক চিকিৎসককে নিয়ে শুরু হওয়া টিমের সদস্য সংখ্যা এখন ১০ জন। গত ৩০ দিন মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ বিনামূল্যে প্রায় ৬৫১৯ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। এ ছাড়া ১০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে সবজি বিতরণ, যারা সহায়তা নিতে চান না তাদের জন্য ২১ রমজান থেকে শুরু করে ২৮ রমজান পর্যন্ত প্রায় ১৭০০ প্যাকেট ঈদসামগ্রী ভতুর্কি মূল্যে বিক্রয় করার উদ্যোগ নেন তারা। এ ছাড়া অসহায় দরিদ্রদের জন্য সরকারি ত্রাণের সুষ্ঠু বিতরণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসমাগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান কাউন্সিলর খোরশেদ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877