রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন

‘বিদেশি ডাক্তারদের কাছ থেকে মানবতার শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে’

‘বিদেশি ডাক্তারদের কাছ থেকে মানবতার শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে’

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিদেশি চিকিৎসকদের কাছ থেকে দেশীয় চিকিৎসকদের মানবতার শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু নামে করোনাভাইরাস সংক্রমিত এক কানাডা প্রবাসী। গতকাল শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।

পর্যাপ্ত পিপিইর অভাবে ডাক্তারদের করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু লিখেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আমি বলব অবশ্যই প্রথমে নিজের জীবন বাঁচান। কিন্তু কজন ডাক্তার আছেন আমার কথায় প্রতিবাদ করে বলবেন, যেকোনো মূল্যে মানুষের জীবন বাঁচানো আমার ব্রত।

হ্যাঁ এ কথাটিই এখন বলছেন বিধ্বস্ত নিউইয়র্কের ডাক্তাররা। করোনা না হলে জানতাম না আমেরিকার মতো একটি দেশও রোগী সামলাতে হিমশিম খায়। নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রিউ কুয়োমো রোগীদের ভেন্টিলেটর আর ডাক্তারের পিপিই সরবরাহের তাগিদ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন।

কিন্তু ডাক্তাররা কি সেই অপেক্ষায় বসে আছে? প্লাস্টিক, গারবেজ ব্যাগ আর স্কচটেপ দিয়ে বানিয়ে নিচ্ছে নিজেদের পিপিই। প্লাস্টিকের স্বচ্ছ পর্দার ভেতর থেকে দেখছে রোগী। গ্লোবাল নিউজে দেখাচ্ছে অনেক রোগীকে বাঁচাতে না পেরে ডাক্তাররা চিৎকার করে কাঁদছে। সব ডাক্তার তাদের ছুটি বাতিল করেছে। অবসরপ্রাপ্তরা ফিরছে কাজে। অসংখ্য ডাক্তার ভিডিও কলে রোগীকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছে। কারণ মৃত্যুভয়ে তারা ডাক্তারের পেশাকে কলঙ্কিত করতে পারছে না।’

তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশের অনেক ডাক্তারের আর্থিক সক্ষমতা বিদেশের এইসব ডাক্তারের চাইতে বেশি। সেই প্রসঙ্গে নাই বা গেলাম। দেশের বদনাম করে বিদেশের সুনাম করা খুব কঠিন, কিন্তু এদের কাছে মানবতার শিক্ষা নেবার সময় এসেছে। নাহলে কঙ্কালের ওপর রঙিন সিল্কের জামাটা বড় বেমানান হয়ে যাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ ডাক্তারদের জাতীয় বীর ঘোষণা করছে। আমরাও তাই চাই। কিন্তু পারছি না।

তবু ভরসা এই মহাদুর্যোগে দুই-একজন মহান ডাক্তার রোগী দেখছেন। আমার পরিচিত ফেসবুকে আছেন একজন গাইনীর ডাক্তারকে দেখলাম সার্জিক্যাল গাউন পড়ে রোগী দেখছেন। এরকম আরও কেউ কেউ আছেন কিন্তু সংখ্যাটা খুব কম। এই কম সংখ্যকরাই এখন আমাদের বীর। বাকিরা ইতিহাসের আলোতে থাকবে না।’

বাংলাদেশে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা না পাওয়ার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘পিপিইর অভাবে করোনা ছাড়াও সাধারণ রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই হাসপাতালে এখন চিকিৎসা পাচ্ছে না। ডাক্তারির মতো একটি সম্মানিত পেশার বিরুদ্ধে কথা বলার কোনো যোগ্যতা আমার নেই। মহৎ পেশার ডাক্তারের ব্যাপারে করোনাকালীন সময়ে সরকারের নিতে হচ্ছে নানা কঠোর সিদ্ধান্ত যা ছিল সময়োপযোগী। যার পরিপ্রেক্ষিতে কদিন আগে শুনলাম সারা দেশের ডাক্তাররা কর্মবিরতি ঘোষণার হুমকি দিয়েছিল। আমার এক আত্মীয় রাজশাহীতে কয়েক হাসপাতাল ঘুরে স্ট্রোকের রোগীর চিকিৎসা করাতে পারেননি। চট্টগ্রামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছে গর্ভবতী মেয়েকে নিয়ে দুইদিন থেকে ডাক্তার দেখাতে পারছে না। ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য ডাক্তার তাদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করেছে। সাধারণ রোগীরা পড়েছে বিপাকে। এক যুবক হার্টের অসুখে আক্রান্ত দুলাভাইকে পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি করতে না পারলে তিনি মারা যান বলে ফেসবুকে লিখেছেন। আজকে শুনলাম আমার বন্ধুর প্রতিবেশী চারটি হাসপাতালে কিডনি রোগের চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায়।’

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এদেশে সাধারণ রোগীরা কবে বিপাকে ছিল না? কোনোদিন রাস্তার হতদরিদ্রের কথা শুনিনি তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে খরুচে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর এই মহামারিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দারুণ অব্যবস্থাপনার নগ্ন চেহারা বেরিয়ে এসেছে। সরকারি হাসপাতালের দারুণ দৈন্যদশার সুযোগে গড়ে উঠেছে অ্যাপোলো, স্কয়ার,ইউনাইটেডের মতো হাসপাতাল নামের পাঁচতারা হোটেল। যেখানে চিকিৎসা হয় শুধু একটা বিশেষ শ্রেণির। সম্ভবত এ কারণেই চিকিৎসা ভীতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের পরিবারবর্গ নিজের দেশের ভয়ংকর পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ছাড়ছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের কোনো সরকারের আমলেই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি কারণ মন্ত্রী আমলাদের চিকিৎসা অবধারিতভাবে হয়েছে লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুরে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877