ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত তাবলিগ জামাতের বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত নিজামুদ্দিন মারকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই মসজিদে অনুষ্ঠিত হওয়া তাবলিগ জামাতের সমাবেশ থেকে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। এছাড়া সমাবেশে যোগ দিয়ে বহু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। ওই মসজিদটি সিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পাশাপাশি নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকে কমপক্ষে ৮৫০ জনকে অন্য একটি জায়গায় কোয়ারান্টাইন করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যেই কম করে ২০০ জনের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা সংক্রমণ হয়েছে কিনা তার জন্যে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ২৪ জনের শরীরে ওই সংক্রমণ হয়েছে বলে প্রমাণও মিলেছে। সংক্রমিতদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছে দিল্লি সরকার।
জানা গেছে, গত ১ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে দিল্লির ওই মসজিদে অন্তত ২ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। দিল্লিতে ওই মসজিদে (নিজামুদ্দিন মারকাজে) শুধু ভারত নয়, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিজিস্তান থেকেও বিভিন্ন মানুষজন এসে ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখান থেকেই ব্যাপক হারে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর।
এভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় দিল্লির ওই মসজিদের মওলানার বিরুদ্ধে পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে কেজরিওয়াল সরকার।
মারাত্মক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যেখানে সমস্ত রকম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, ঠিক সেই সময় ওই নিয়ম উপেক্ষা করে এই মাসের শুরুর দিকে ১০০ বছরেরও পুরোনো ওই মসজিদে একটি ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ১৯২৬ সালে স্থাপিত ওই মসজিদে পৃথিবীর নানা দেশে থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর করোনা সংক্রমণের কারণে প্রাণ খোয়াতে হল তেলেঙ্গানার ছয় বাসিন্দাকে, মারা গেছেন শ্রীনগরেরও এক ব্যক্তি। এদিকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে ওই জমায়েতে অংশ নেওয়া ৯ ব্যক্তির মধ্যে করোনা সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে এক ব্যক্তির স্ত্রীর দেহেও মিলেছে ওই মারণ ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ।
এদিকে এক বিবৃতিতে দিল্লির পশ্চিম নিজামুদ্দিনে তবলিগ-ই-জামাতের ‘মারকাজ’ কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী মোদি ২২ মার্চ “জনতা কারফিউ” ঘোষণা করার পরে এই অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে ওই মসজিদ চত্বরে প্রচুর মানুষের জমায়েত ছিল। তারা ওই কারফিউয়ের কারণে আটকা পড়ে। তাদের আর অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। আর এরপরেই শুরু হয়ে যায় দেশ জুড়ে লকডাউন। তাই বাধ্য হয়েই মসজিদ সংলগ্ন এলাকাতেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে বাধ্য হন ওই মানুষজন। এনডিটিভি।