ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে ২৯ মার্চ রোববার স্থানীয় সময় রাত দুইটা থেকে ঘড়ির এক ঘণ্টা কাঁটা এগিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ রাত দুইটার সময় ঘড়ির কাঁটার পরিবর্তন করে এক ঘণ্টা এগিয়ে তিনটা করা হয়েছে। ফলে গতকাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে স্লোভেনিয়ার সময়ের ব্যবধান চার ঘণ্টা এবং সারা পৃথিবীতে সময় নির্ণয়ের জন্য প্যারামিটার হিসেবে পরিচিত গ্রিনউইচ মিন টাইম বা জিএমটির সঙ্গে স্লোভেনিয়ার সময়ের ব্যবধান দুই ঘণ্টায় এসে পৌঁছালো।
শুধু স্লোভেনিয়া নয় সেন্ট্রাল ইউরোপীয় টাইম জোনে থাকা প্রায় সকল দেশ যেমন: স্পেন, ইতালি, বেলজিয়াম, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, অস্ট্রিয়াও একইভাবে তাদের ঘড়ির কাঁটাকে এভাবে এক ঘণ্টা এগিয়ে এনেছে। তাই এ টাইম জোনের অধীনে থাকা সকল দেশের সঙ্গেও আজকের থেকে সময়ের পার্থক্য চার ঘণ্টা এবং গ্রীনউইচ মিন টাইম বা জিএমটির সঙ্গে এখন থেকে এ সকল দেশের সময়ের পার্থক্য হবে দুই ঘণ্টা।
অন্যদিকে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, বেলারুশ, ইউক্রেন, গ্রীস অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপিয়ান টাইম জোনে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে আজকের থেকে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য তিন ঘণ্টা এবং গ্রীনউইচ মিন টাইম বা জিএমটির সঙ্গে এখন থেকে পূর্ব ইউরোপিয়ান টাইম জোনে থাকা দেশগুলোর সময়ের পার্থক্য হবে তিন ঘণ্টা।
উল্লেখ্য যে প্রত্যেক বছরের মার্চ মাসের শেষ রোববার এবং অক্টোবর মাসের শেষ রোববার এ দুইবার ইউরোপের দেশগুলো তাদের সময়ের পরিবর্তন ঘটায়। ২০০১ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক অধিবেশনে সদস্য দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ঘড়ির কাঁটার পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে।
এজন্য প্রত্যেক বছরের মার্চ মাসের শেষ রোববার ঘড়ির কাঁটাকে এক ঘণ্টা এগিয়ে নিয়ে আসে যা “সামার টাইম” হিসেবে পরিচিত। আবার অক্টোবর মাসের শেষ রোববারে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে আবার মূল সময় ধারায় ফিরিয়ে আনা হয় যা “উইন্টার টাইম” হিসেবে পরিচিত।
২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান কমিশনের এক বিবৃতিতে মৌসুমভিত্তিকভাবে ঘড়ির কাঁটার এ পরিবর্তনের বিপক্ষে এক প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় যেখানে বলা হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অধীনে থাকা বিভিন্ন দেশের শতকরা ৮৪ ভাগ মানুষ এ পরিবর্তনের বিপক্ষে এবং তারা মনে করেন আদৌতে বছরে দুইবার এ ধরণের সময় পরিবর্তন তাদের প্রাত্যহিক জীবনে খুব বেশি একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে না।
গত বছরের ২৬ মার্চ কমিশনের পক্ষ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্টে অফিসিয়ালি এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয় এবং আশা করা যাচ্ছে যে যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাদের এ প্রস্তাবনা গ্রহণ করে আগামী বছর থেকে হয় তো এরকমভাবে আর সময়ের পরিবর্তন আনা হবে না। অর্থাৎ “সামার টাইম” এবং “উইন্টার টাইম” এ দুটি ধারণা আর থাকবে না আগামী ২০২১ সাল থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাতে সামার টাইমকে “ডেলাইট সেভিং টাইম” নামেও উল্লেখ করা হয়। যদিও এ দুইটি দেশের সব জায়গায় যে সামার টাইম ব্যবহৃত হয় এমনটি নয়। আমেরিকানদের মতে তাদের অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার হিসেবে পরিচিত বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিংক এ প্রস্তাবনার উদ্যোক্তা যদিও আধুনিক পৃথিবীতে নিউজিল্যান্ডে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত এন্টোমলজিস্ট জর্জ হাডসনকে ডেলাইট সেভিং টাইমের প্রস্তাবনার মূল কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
১৯১৬ সালের ১০ এপ্রিল জার্মান ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডেলাইট সেভিং টাইমের প্রবর্তন করা শুরু হয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এ ডেলাইট সেভিং টাইমের ব্যবহার শুরু করা হয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতে সর্বতোভাবে এখনও ডেলাইট সেভিং টাইমের ব্যবহার গৃহীত হয়নি।
গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে বিশ্বব্যাপী যখন শক্তির ঘাটতি দেখা যায় তখন পৃথিবীর অনেক জায়গায় এ কনসেপ্টটি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং আজকের দিনে যে সকল দেশ এ ডেলাইট সেভিং টাইম ব্যবহার করে তাদের যুক্তি হচ্ছে গ্রীষ্মকালে যখন দিনের দৈর্ঘ্য বেশি থাকে তখন ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনলে অধিক পরিমাণে সূর্যালোকে কাজে লাগানো যায়, যার ফলে শক্তির অপচয় অনেকটা কমে আসে।
এশিয়া এবং আফ্ৰিকার দেশগুলোতে এখনও ঘড়ির কাঁটার পরিবর্তনের এ ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। প্রকৃতি ও জীববিজ্ঞানীদের অনেকে এ ঘড়ির কাঁটার পরিবর্তনের এ ধারণাকে সমর্থন করেন না। কেননা তাদের মতে প্রকৃতির সকল জীবই একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক ধারা বজায় রেখে চলে, তাই মানুষের জীবনে এ ধরণের পরিবর্তন তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন না বলে তাদের অনেকে দাবি করে থাকেন।