শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
অশান্ত রোগাক্রান্ত বিশ্ব আল-কুর’আনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে মুক্তি পেতে পারে

অশান্ত রোগাক্রান্ত বিশ্ব আল-কুর’আনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে মুক্তি পেতে পারে

সোহেল সানি:
ধর্ম কি? ধর্ম ধৃ ধাতু থেকে উদ্ভব যার অর্থ ধারণ করা। সাধারণ মানুষ ধর্মকে ধারণ করে। ধর্ম হলো এমন এক অদৃশ্য শক্তির ওপর আত্মসমর্পণ ও গভীর বিশ্বাস, যা মানুষের জীবন ও নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে মানুষের একান্ত কামনা অপরিহার্য। অতি উৎকৃষ্টের প্রতি অনমনীয় আনুগত্য প্রকাশই হচ্ছে ধর্ম। ধর্ম হলো এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি যা জগতসৃষ্টির পেছনে সৃষ্ট্রার অস্তিত্ব স্বীকার করা। যিনি ভাল-মন্দ ন্যায়-অন্যায় পাপপুণ্যের বিচার করেন। কুর’আন বিশ্ববাসীর জন্য সর্বকালের, সর্বদেশের সর্বজাতির চিরন্তন, শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আল্লাহ বলেন,” মহাপরাক্রমশালী সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দার প্রতি কুর’আন নাযিল করেছেন, নিখিল বিশ্বকে ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে।, “কুর’আনেই সকল আসমানী কীতাবে বর্ণিত বিষয়সমূহ একত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। মৌলিকভাবে জ্ঞানবিজ্ঞান ও ইলমবিদ্যার সমাগম ঘটেছে এতে। আল্লাহ বলেন “এর পূর্বে ছিল মুসা (আঃ) কীতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ, এ কীতাব তার সমার্থক। ” আল্লাহ বলেন,” নিশ্চয়ই আমার এ মহাগ্রন্থে আল- কুর’আনে মানব জাতির কল্যাণে প্রতিটি বিষয় বিশদভাবে বর্ণিত করেছি। ” কুর’আন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কীতাবের হুকুম আহকাম বাতিল বলে ঘোষণা করেছি। সেগুলোর সারসংক্ষেপ আল-কুর’আনে সন্নিবেশিত হয়েছে। কুর’আন বিজ্ঞানময় মহাগ্রন্থ। গবেষক ও ঐতিহাসিকদের জন্য এক মহাগ্রন্থ বহু জ্ঞানবিজ্ঞান এবং বহুরহস্যের উৎসের মহাজ্ঞান ভান্ডার। মহান আল্লাহ এ গ্রন্থকে কুর’আনুল হাকীম’ বা বিজ্ঞানময় কুর’আন বলেন। মানবের কল্যাণকামী আধ্যাত্মিক ও জাগতিক বিষয়ে পরিপূর্ণ জীবন-বিধান সম্বলিত ধর্মগ্রন্থ পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। কুর’আন কোন নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী সম্প্রদায়, দেশকালকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়নি।বরং সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য সর্বাত্মক হিদায়াতের সওগাত নিয়ে আবির্ভূত। আল্লাহ ঘোষণা করেন,” সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ও কীতাব অবতরণ করেছেন, আর এতে তিনি কোন প্রকার বক্রতা তথা অপূর্ণতা রাখেননি”- (সুরা কাহাফ-১)। আল্লাহ বলেন,”বলো হে মানবজাতি, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে সত্য পথের দিশা এসেছে। “( সুরা ইউনুস -১০৮) আল্লাহ বলেন,” আজ আমি তোমাদের জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। আমার নিয়ামত বাকী তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করলাম। তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থারূপে ইসলামকে মনোনীত করলাম (আল মায়িদা-৩) ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান, মুশরিক ও মুনাফিক এ চারশ্রেনীর পথভ্রষ্ট মানুষের সাথে বিতর্কিত সম্পর্কিত জ্ঞান। তাদের আকীদা বিশ্বাস ও মতবাদের ভ্রান্ততা প্রমাণ করা হয়েছে। সাথে সাথে তাদের ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক মতাদর্শের প্রতি জনমনে ঘৃণা জাগ্রত করা হয়েছে। এদের কুসংস্কার ও ভ্রান্ত মতবাদের অসারতা প্রতিপন্ন করে জবাবদান করা হয়েছে। বিশ্ব স্রষ্টা ও নিয়ন্তা হিসাবে আল্লাহ পরিচয় অনুগ্রহ, অবদান, কুদরতী নিদর্শনাদি সম্পর্কিত জ্ঞান। আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি রহস্য, দৈনন্দিন জীবনে প্রাপ্ত বান্দার অভিজ্ঞান, সর্বোপরি স্রষ্টার সর্বাধিক গুণাবলীর পরিচয় সম্পর্কীয় আলোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে। সৃষ্টিতত্ত্বে বলা হয়েছে, আল্লাহর সৃষ্টি বস্তুর অবস্থা সংক্রান্ত জ্ঞান। হক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে অতীত সংঘর্ষ ও রেষারেষির ইতিহাস আলোচিত হয়েছে। হক ও সত্যপ্রিয়তার উজ্জ্বল পরিণাম, মিথ্যা ও বাতিলের শোচনীয় পরিণতি মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। সত্য সম্পর্কে উৎসাহিত করা হয়েছে। মিথ্যার জন্য সতর্ক ও সাবধান করা হয়েছে। সৃষ্টি লোকের লয়, মৃত্যু, অক্ষমতা এবং মৃত্যুর পর অনন্ত জীবন জান্নাত জাহান্নামের দৃশ্যের প্রত্যক্ষ বর্ণনা, রহমত ও আযাবের ফেরেস্তাদের আগমণ উপস্থিতি, কিছু আলামত, হযরত ঈসা (আঃ) এর অবতরণ, দাজ্জাল – ইয়াজুজ – মানুষের আবির্ভাব, ইসরাফীলের সীঙ্গায় ফুঁকের উল্লেখ রয়েছে। হাশর -নশর, হিসাব-নিকাশ, পাপপুণ্য, জ্ঞান, আমলনামা, মুমিনগণের আল্লাহর দীদার ইত্যাদি বর্ণনা। আযাব ও শাস্তির নানারকম ভীতিপ্রদ বর্ণনা। জান্নাতের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও নিয়মিত রাকীর বিবরণ এসব কিছুই রয়েছে অন্তর্ভুক্ত। মানবজাতিকে আত্মসচেতন ও সদাসর্তক করার জন্য আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের জন্য উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত করাই মূল উদ্দেশ্য। জীবনভর বহুধর্মগ্রন্থ পাঠ করার পর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধ ও নির্ভেজাল গ্রন্থ কোনটি, তা গবেষণা করার চেষ্টা করছি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের ভান্ডারে যতটুকু মজুদ করেছি, তা থেকে অবলীলায় ও নিঃসংকোচে এই সিদ্ধান্তে অবতীর্ণ হয়েছি যে, পবিত্র কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা যাবতীয় বিকৃতি বিভ্রান্তি ও ভুল ত্রুটির অভিশাপ হতে চিরমুক্ত এবং চিরপবিত্র অবস্থায় অবিকল বিরাজমান। এ মহাগ্রন্থে সংশয়ের লেশমাত্র অবকাশ নেই। কুর’আনের ভাষা ও গুনগতমানের শ্রেষ্ঠত্ব লক্ষ্মণীয়। এর ভাব, ভাষা, অলঙ্কার, উপমা, ছন্দ, মূর্ছনা, রচনাশৈলী, বিষয়বস্তুর অভিনব গ্রন্থনা, বাক্যের অনুপম বিন্যাস, শাব্দিক দ্যোতনা সবকিছু ঘিরে এক অতুলনীয় চির শাশ্বত গুণমানে অধিষ্ঠিত। বিষয়বস্তুর শ্রেষ্ঠত্ব আল-কুর’আন কাঠামোগতভাবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এর বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর ব্যপকতা সুগভীর। কুর’আনের এ সসীম পরিসরে লুকায়িত রয়েছে নিযুত কোটি সাগরের বিশালতা। ১০৪ খানা আসমানী কীতাবের মধ্যে সর্বশেষ গ্রন্থ আল-কুর’আন। কোন নবী-রাসূল ছাড়া আসমানী কীতাব অবতীর্ণ হতে পারেনা। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) হলেন সর্বশেষ বিশ্বনবী। কুর’আনই পূর্ববর্তী আসমানী কীতাবের সারসংক্ষেপ। অতীতকালের সকল আসমানী কীতাবের বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ ও সার নির্যাস সন্নিবেশিত হয়েছে আল- কুর’আনে। অতীতের সকল আসমানী কীতাব বিকৃত ও পরিবর্তিত। অতীতের সকল আসমানী গ্রন্থ ছিল কোন দেশ, সম্প্রদায় ও কালের গন্ডীরসীমানাবদ্ধ। কিন্তু আল-কুর’আন সকল সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে সর্বকালীন ও বিশ্বজনীন একমাত্র পূর্নাঙ্গ আসমানী গ্রন্থ। আল্লাহ বলেন,”আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনইসলামকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত অনুগ্রতা সম্পূর্ণ করলাম। তোমাদের জীবনব্যবস্থা হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করলাম। করোনা ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধে কোরআনের মাধ্যমে আবিস্কৃত হতে পারে কোনো মহা ঔষধ। এবং নিশ্চয়ই মহারাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কেউ না কেউ তা আবিস্কার করে আল্লাহর কুর’আনকেই উর্ধ্বে তুলে ধরবেন। সেই বিশ্বাস থেকেই আমার এই লেখাটি প্রকাশ করছি।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877