স্বদেশ ডেস্ক: প্রায় আড়াই শ’ বছর ধরে বাংলাদেশের কারাবন্দিদের যে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিলো সেখানেও পরোক্ষভাবে অমানবিক প্রথাই বিরাজ করেছে। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য মানবিক হতে হয়। বর্তমান সরকার প্রধান কতটা মানবিক গুণের অধিকারী সেটা বিশ্ববাসী জানে। মূলত: তারই সদিচ্ছায় দেশে কারাবন্দিদের দীর্ঘ দিনের প্রচলিত খাবারের অমানবিক বঞ্চনার অবসান হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে করা আইনে কারাগারগুলোতে রুটি ও শুকনো গুড়ের পরিবর্তে বন্দিদের এখন থেকে দেয়া হচ্ছে খিচুড়ি, সবজি এবং হালুয়া, রুটি। একই সঙ্গে এ খাবারের পরিমাণও দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পেট পুরে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হলো। ঢাকাসহ সারাদেশের ৬৮ কারাগারে আটক ৮১ হাজার ১৭৮ জন বন্দির জন্য একযোগে নাশতার এই মেন্যু চালু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এটি প্রশংসনীয়। একজন অপরাধীও যে মানুষ এই ভাবনাটিই সুন্দর। স্মরণযোগ্য, দু’বছর আগে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) ও বাংলাদেশ কারা অধিদফতর আয়োজিত একটি সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘কারা নিরাপত্তা ও মানবিক চাহিদার ভারসাম্য।’ সম্মেলনে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়। এগুলো যথাক্রমে কারাগারে স্বাস্থ্যসেবা, কারাগার নকশা ও শ্রেণিভুক্তিকরণ, বন্দিদের শ্রেণিভুক্তিকরণ এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ‘ম্যান্ডেলা রুলস’ মেনে ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বন্দিদের পরিষেবা প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। বর্তমান সরকার কারাবন্দিদের মানুষ হিসেবে ন্যূনতম প্রাপ্যটুকু নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কারাবন্দিরা মুক্তির পর যাতে পুনরায় অপরাধে না জড়ায় এবং সংশোধনের সুযোগ পান সেজন্য কারাগারের ভেতর প্রায় ৩৮টি কাজের ওপর বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তারা যাতে কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে, এ কারণে এসব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের কারাগারগুলোকে এখন সংশোধনাগারে পরিণত করা হয়েছে। তাদের ঘুমানোর জন্য বালিশ সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারাবন্দিদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার তিন-চারগুণ বেশি কয়েদি অবস্থান করছে, যা এক ধরনের মানবিক বিপর্যয়ই বটে।