বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
করোনা যুদ্ধের শেষ কোথায়

করোনা যুদ্ধের শেষ কোথায়

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা ভাইরাস যাত্রা শুরু করেছিল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে। দুই মাসের মাথায় গতকাল পর্যন্ত ভাইরাসটি ১৩৫টি দেশ ও অঞ্চলে থাবা বসিয়েছে। নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ২১৪। আর দেশে দেশে কত শত মানুষ কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন তার হিসাব নেই। এ তো গেল শুধু জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতির দিক। আক্রান্ত দেশগুলোসহ বিশ্বের শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক ধস নেমেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল।

গতকাল সংবাদমাধ্যম বিবিসি যে তথ্য দিয়েছে তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোতে স্কুল বন্ধ, খেলা বন্ধ, সাংস্কৃতিক কর্মকা- বন্ধ। বলা ভালো, বিশ্ব থমকে রয়েছে-আক্রান্ত রাষ্ট্রগুলো সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে ভাইরাসকে মোকাবিলার চেষ্টা করছে, কিন্তু করোনার গতি কি রোধ করা যাচ্ছে?

বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সবচেয়ে যে দিকটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা হলো অর্থনীতি। অর্থনীতির যে মূল চালিকাশক্তি যোগাযোগব্যবস্থা- করোনার কারণে সেটিই আজ বিপর্যস্ত। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুধু চীনেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ২ কোটি মার্কিন ডলার। এর পর এ অঙ্ক নিশ্চয়ই আরও বেড়েছে। ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে শুধু আপৎকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে। ইউরোপের শেয়ারবাজার অস্বাভাবিক মন্দাভাবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল বিবিসি জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা চাঙ্গা করতে ‘আন লিমিটেড’ ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে জার্মান সরকার। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক টানাপড়েনে ধুঁকছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে-করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা কর্মী ছাঁটাই করবে। তবে বিশ্বব্যাপী করোনায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার প্রকৃত হিসাব অনুমানের চেয়েও বেশি।

করোনার বিরুদ্ধে নানাভাবে লড়ছে বিশ্ব। একে তো জীবাণুর অপ্রতিরোধ্য বিস্তার, অন্যদিকে রয়েছে ‘গুজব’। সঠিক তথ্য যত দ্রুত ছড়ায়, গুজব যেন তার কয়েকশ গুণ বেশি বেগে ছড়াতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কিছুদিন আগে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, প্রতিটি মহামারীর সময় তথ্যের মহামারীও দেখা দেয়। করোনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চীনের এক দোকান থেকে টিস্যু পেপার ডাকাতি হয়েছে! আর অস্ট্রেলিয়ার এক ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক হুড়মুড় করে ঢুকে যে যেমন পারছে টিস্যু পেপার লুফে নিচ্ছে। এই করোনার-দিনে এমন চিত্র বেশকিছু দেখা গেছে।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইম নামে এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি বছর সাধারণ জ্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ হাজার লোক মারা গেছেন। কিন্তু এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু করোনা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গোটা ইউরোপের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী ইউরোপের ২৬টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তার এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক সমালোচনা করছে ইউরোপ। কিন্তু তাতে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেননি ট্রাম্প। স্পেন গতকাল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা কিছুটা হলেও আশার কথা শুনিয়েছেন। বলছেন, ভাইরাসটি কিছুদিনের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কেননা এর উৎসস্থল উহানে ইতোমধ্যে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। খোদ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং উহান সফর করে এ কথা বলেছেন। উহানের অস্থায়ী হাসপাতালগুলোও গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। হয়তো এটিই ঠিক যে, কিছুদিনের মধ্যে করোনা প্রতিরোধের সঠিক ব্যবস্থা আবিষ্কার হবে। কিন্তু এতেই কি শেষ? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে- না।

এর আগেও ভাইরাসের প্রকোপের মুখে পড়েছে মানবজাতি। তাতে শুধু সুনির্দিষ্ট ভাইরাস প্রতিরোধ করা গেছে, কিন্তু নতুন ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়নি। আর সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, নতুন ভাইরাসগুলো পূর্বের চেয়ে প্রাণঘাতী শক্তি নিয়ে উদ্ভব হয়। নিকটঅতীতে তো কম ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের দেখা হলো না- সার্স, মার্স, জিকা, ইবোলা- আরও কত কি! সবগুলোই শুরুতে প্রাণঘাতী ছিল। পরে টিকা আবিষ্কার হয়েছে।

আর করোনা ভাইরাস কী থেকে কিভাবে উদ্ভব হলো- সে তথ্যই এখনো অজানা। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে- ‘আমরা অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি’। কাজেই ধারণা করা হচ্ছে, করোনা না হোক- মানবজাতিকে আগামী দিনেও এই অতিশয় ক্ষুদ্র অণুজীবের বিরুদ্ধে লড়াই করেই টিকে থাকতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877