সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

পদ্মায় নৌকাডুবি মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮, নিখোঁজ শুধু কনেই

পদ্মায় নৌকাডুবি মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮, নিখোঁজ শুধু কনেই

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে রোববার তৃতীয় দিনের মতো নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত থাকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বর-কনেবাহী দু’টি নৌকাডুবির পর গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ ৯ জনের মধ্যে ছয়জনের এবং গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত আরো দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল আটজনে। নৌকাডুবির ঘটনায় এখন শুধু কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (১৬) নিখোঁজ রয়েছে।

এ ছাড়া রোবববার বেলা সাড়ে ১১টায় ডুবে যাওয়া দ্বিতীয় নৌকাটিও নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে শনিবার দুপুরে উদ্ধার করা হয় অপর নৌকাটি।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোর শোকে নিহতদের বাড়িতে এখনো মাতম চলছে।

রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, দু’টি নৌকায় বর-কনেসহ অন্তত ৩৬ জন যাত্রী ছিলেন।

এ দিকে, সর্বশেষ ব্যক্তিটিকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত পদ্মা নদীতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবার রাত থেকে আমরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছি। নিখোঁজ ৯ জনের মধ্যে আটজনের লাশ আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি একজনেরও আর বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এখনো তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ জন্য আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রাজশাহীর নৌ-পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। যে আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন- কনে পূর্ণিমার দুলাভাই রতন আলী (৩০), তার মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৬), কনের চাচা শামীম হোসেন (৩৫), স্ত্রী মনি খাতুন (৩০), তাদের মেয়ে রশ্মি খাতুন (৭), তাদের আত্মীয় এখলাস হোসেন (৩৫), কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন স্বর্ণা (১৩) এবং কনের খালা আঁখি খাতুন (২৫)।

তাদের মধ্যে রোববার দুপুরে রুবাইয়ার লাশ উদ্ধার করেন জেলেরা। জাল ফেলা হলে তার লাশ উঠে আসে। রুবাইয়ার বাবার নাম রবিউল ইসলাম রবি। তাদের বাড়ি পবার আলীগঞ্জ মোল্লাপাড়ায়। সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এরপর বিকেলে রাজশাহীর চারঘাট সীমানার ভেতরে পদ্মা নদীতে আঁখি খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আঁখি খাতুনের বাবার নাম আবুল হোসেন। তার বাড়ি পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামে। আঁখি খাতুনের স্বামীর বাড়ি নগরীর ভাটাপাড়ায়। তার নাম আসাদুজ্জামান জনি। তিনি হড়গ্রাম পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন। নৌকাডুবির পর শুক্রবার রাতেই বালু তোলা ড্রেজার নৌকা দিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার দুপুরে রুমন হাসপাতাল থেকে নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় আসেন। এখনো তিনি স্ত্রীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। আশা করছেন স্ত্রীকে খুঁজে পাবেন তিনি।

কনে পূর্ণিমার বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামে। তার বাবার নাম শাহিন আলী। আর বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৬) পদ্মা নদীর ওপারে একই উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে। রুমন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। নগরীর নিমতলা এলাকায় তাদের বাড়ি আছে। এ বাড়িতে রুমন একাই থাকেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন চরের বাড়িতে।

এ দিকে, নগরীর শ্রীরামপুরে নৌকাডুবির ঘটনায় পদ্মা পাড়েই অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক। নিখোঁজসংক্রান্ত কোনো রকম তথ্য থাকলে বা পেলে ০১৭৩৩-৩৫২০০১ এ নম্বরে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে শনিবার সকালে নৌকাডুবির ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো: হামিদুল হক জানান, এরই মধ্যে নিহতদের স্বজনদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877