রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

মায়ের মর্যাদা ইসলামে

মায়ের মর্যাদা ইসলামে

মাওলানা দৌলত আলী খান :
নারীরা হচ্ছেন মাতৃকুল। তাদের এমন একটি শব্দ রয়েছে, যা আকারে ছোট হলেও গুণের দিক দিয়ে বড়। শব্দটি দ্বারা আমরা প্রতিনিয়ত নিজের মাকে সম্বোধন করি। আর তা হলো ‘মা’। যে কোনো ব্যক্তির চোখে এ শব্দটি পড়লে বা মুখে উচ্চারণ করা হলেই মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়। আল্লাহ তায়ালা মাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম মাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে। মায়ের মর্যাদা বাবার চেয়ে তিনগুণ বেশি। যেমনÑ হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, কে সবচেয়ে বেশি আমার উত্তম সাহচর্য পাওয়ার অধিকারী? তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় প্রশ্ন করল, তারপর? তিনি বললেন, তোমার মা। সর্বশেষ প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, তোমার বাবা।
কোরআনে মায়ের মর্যাদা : বাবা-মা উভয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সন্তানের কর্তব্য। তবে মর্যাদার দিক থেকে সন্তানের কাছে মা-বাবা সমান নন। কারণ ক্ষেত্রবিশেষ বাবার তুলনায় মা সন্তানের কাছে বেশি মর্যাদাবান। এর উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে মা সন্তানের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেন, তা পৃথিবীতে তুলনাহীন। সন্তান লালনে মায়ের পরিশ্রমের অন্ত নেই। কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং দুই বছর ধরে নিজের বুকের দুধ পান করান। এটাই মা-জাতির শ্রেষ্ঠত্বের জন্য অদ্বিতীয় প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে তাকে গর্ভ ধারণ করেছেন এবং দুই বছর বুকের দুধ পান করালেন।’ (সূরা লোকমান : ১৪)।
বিধবা হিসেবে মায়ের মর্যাদা : মা যদি বিধবা হন; তবে সন্তান থাকলে তাকে বাবার মতো ভূমিকা পালন করতে হয়। এটি মায়ের জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময় এবং ঝুঁকিও বেশি। বিধবা মা ইচ্ছে করলেই পুনরায় স্বামী গ্রহণ করতে পারেন, এতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিধবা মা সন্তানের মুখপানে তাকিয়ে নিজের যৌবনকে উৎসর্গ করে দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বিরত থাকেন। স্বীয় সন্তানকে মানুষ গড়ার পেছনে বিধবা মা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান। হাদিসে বিধবা মা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি বিমর্ষ চেহারার বিধবার পাশে কেয়ামতের দিন এরূপ থাকবÑ এই বলে তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙুলের দিকে ইঙ্গিত করেন। অতঃপর বলেন, এই বিধবার মর্যাদা ও যৌবন থাকা সত্ত্বেও এতিম সন্তানদের লালন-পালন ও প্রশিক্ষণে সে নিজেকে উৎসর্গ করেছে। এমনকি এ অবস্থায় হয় সন্তান বেঁচে থেকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে নয়তো মৃত্যুমুখে পতিত হয়।’ (আবু দাউদ : ৫১৫১)।
মা হিসেবে উত্তরাধিকারী সম্পত্তির মালিক : ইসলামি শরিয়তে বাবার পাশাপাশি মাকেও উত্তরাধিকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কোথাও এক-তৃতীয়াংশ আবার কোথাও এক-ষষ্ঠাংশের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং ইসলাম মাকে নারী হওয়ার কারণে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি। ইসলাম ধর্মে মাতৃকুলকে এভাবেই শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দান করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে বাবা-মা উভয়ের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ। আর সে নিঃসন্তান হলে এবং শুধু বাবা-মাই উত্তরাধিকারী হলে তার মায়ের জন্য এক-তৃতীয়াংশ। আর তার একাধিক ভাই কিংবা বোন থাকলে তার মায়ের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ।’ (সূরা নিসা : ১১)।
মা সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধার পাত্রী : আল্লাহ তায়ালা মাকে ভক্তি-শ্রদ্ধার নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআন মজিদে বাবার সঙ্গে মায়ের কথা উল্লেখ করে স্পষ্টভাবে এ নির্দেশ দান করা হয়েছে যে, তোমরা কখনও মা-বাবার প্রতি বিরক্তিসূচক উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করবে না। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ উভয়ভাবেই মায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। সুতরাং মায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য সন্তানকে ভাষায় নম্র এবং অন্তরের দিক দিয়ে বিনয়ী হতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার রব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, একমাত্র তাঁকে ব্যতীত আর কারও ইবাদত করবে না এবং বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। যখন তাদের একজন অথবা উভয়ই তোমার সামনে বার্ধক্য অবস্থায় উপনীত হন, তখন তাদের বিরক্ত হয়ে উহ্ শব্দ বলো না। তাদের ধমক দিও না, বরং তাদের সঙ্গে নরম ও সুন্দর ভাষায় কথা বলো। তাদের জন্য তোমার ভক্তি-শ্রদ্ধার বাহু অবনমিত করে দাও এবং তাদের জন্য দোয়া করো, হে আমার রব! তাদের দুজনের প্রতি রহম করো। যেমন তারা আমাকে বাল্যকালে অনুগ্রহ করে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২২-২৩)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877